২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার দিন। ফাঁসির রায় ঘোষণার পরপরই গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় হামলা চালান জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় চার পুলিশ সদস্যকে। বীর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে চালানো হয় হামলা। ভাঙচুর, লুটপাটের পাশাপাশি দেয়া হয় আগুন।
নিহত চার কনস্টেবল হলেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার খামার ধনারুহা গ্রামের নাজিম উদ্দিন, রংপুরের পীরগাছা উপজেলার রহমতচর গ্রামের তোজাম্মেল হক, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার কিশামত গোবধা গ্রামের হজরত আলী ও বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার ঠাকুরপাড়ার বাবলু মিয়া।
তাদের মৃত্যুর ৯ বছর হয়ে গেলেও হয়নি হত্যা মামলার বিচার। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলছেন, বিচারক সংকটে দীর্ঘ সময়েও শেষ করা যায়নি বিচারিক কার্যক্রম। বিচার না পেয়ে স্বজনের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ স্থানীয়রাও।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কঞ্চিবাড়ি, বেলকা, দহবন্দ, হরিপুর, বামনডাঙ্গা, সর্বানন্দ, রামজীবন ও ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ-মিছিল করেন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা।
তারা বামনডাঙ্গা বাজার, শোভাগঞ্জ বাজার, ছাইতানতলা বাজার, বামনডাঙ্গা রেলস্টেশন, রেলের প্রকৌশল অফিস, বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ি, আওয়ামী লীগের কার্যালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর-লুটপাট চালায়। উপড়ে ফেলা হয় বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনের লাইন।
ভাঙচুর চালানোর পর বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ি। ছবি: সংগৃহীত
সাঈদীর রায় ঘোষণার পর বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে হরতালকারীরা ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। একপর্যায়ে ফাঁড়ির চার কনস্টেবলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগের এক কর্মী এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে তার জিহ্বা কেটে ও চোখ উপড়ে মেরে ফেলা হয়।
সেদিনের জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর ও হত্যার ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আবু হানিফ ৮৯ জনের নামে ও অজ্ঞাতপরিচয় আড়াই হাজার মানুষকে আসামি করে মামলা করেন।
২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সুন্দরগঞ্জ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক ২৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে গাইবান্ধা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ প্রিন্স নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চার্জশিট দেয়ার পর মামলাটি জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত থেকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়।
‘বদলিজনিত কারণে গত দুই থেকে তিন বছর এই আদালতে বিচারক ছিলেন না। এ কারণে মামলার বিচারকাজ পিছিয়ে গেছে।’
প্রিন্স জানান, এই মামলার ৭৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ২২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা সবাই জামিনে মুক্ত। এক আসামির মৃত্যু হয়েছে এবং মামলার মূল আসামি গাইবান্ধা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াত নেতা আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ পাঁচজন দেশের বাইরে থাকায় গ্রেপ্তার করা যায়নি।
তিন মাস আগে এই মামলার বিচারকাজ আবার শুরু হয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। পুলিশের পক্ষ থেকে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করাসহ নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে।’
নিহতদের স্মরণে প্রতি বছরই স্বজন ও স্থানীয়রা শোক র্যালি, আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন।