বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনায় বেড়েছে ডায়াবেটিস রোগীদের বিষণ্নতা

  •    
  • ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০৮:৩৯

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে বিষণ্নতা বেড়েছে উদ্বেগজনজক হারে। একই সঙ্গে করোনা সংক্রমিতদের নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় আজ সোমবার দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস।

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের ৬৭ শতাংশই ছিলেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। করোনা জটিলতা নিয়ে আইসিইউতে ভর্তি হওয়া অর্ধেক রোগীই ডায়াবেটিসের।

এদিকে করোনা মহামারির কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে বিষণ্নতা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। একই সঙ্গে করোনা সংক্রমিতদের নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ডায়াবেটিস চিকিৎসায় নিয়োজিত একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৭ সালের গবেষণায় ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ৩০ শতাংশ বিষণ্নতায় ভোগার কথা বলা হয়। বর্তমান সময়ে এসে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। করোনা মহামারি এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলছে।

বর্তমানে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ৬০ শতাংশই বিষণ্নতায় ভুগছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় করোনা বিদায় নেয়ার পর আরেকটি নীরব মহামারি দেখবে দেশ। বাড়বে আত্মহত্যার প্রবণতাও। এ কারণে এখন থেকেই পরিস্থিতি সামাল দিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে প্রতি ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অন্যদিকে মোট জনগোষ্ঠীর ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বিষণ্নতা রোগে ভুগছে। তবে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মাঝে বিষণ্নতার হার সংক্রান্ত গবেষণার ফলে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।

গবেষকরা একমত যে, এই হার অনেক বেশি। কারণ গবেষণার প্রকৃতি, স্থান, অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি, ব্যবহৃত পরিমাপক ও অন্যান্য কারণে ফলাফলে ভিন্নতা দেখা দিতে পারে। গবেষণাভেদে ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ৩৪ শতাংশ বিষণ্নতা রোগে ভুগছেন।

এ ছাড়া ২০০৭ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষদের ২৯ ও নারীদের ৩০ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে বিষণ্নতার উপসর্গ রয়েছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নন, এমন ব্যক্তির তুলনায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে বিষণ্নতার উপসর্গ উল্লেখযোগ্য হারে বেশি।

করোনা ডেকে আনছে ডায়াবেটিস

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, করোনা জটিলতা নিয়ে যারা আইসিইউতে ভর্তি হয়েছে তাদের ৪২ দশমিক ২ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে। গত বছর চট্টগ্রামে করা এক গবেষণা বলছে, কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পর প্রতি ১০০ জনে একজন (১ শতাংশ) ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। আবার করোনায় আক্রান্ত প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন আগে থেকেই ডায়াবেটিস রোগী। কোভিড-পরবর্তী জটিলতাও সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে। এ ছাড়া কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর ডায়াবেটিস রোগীরা একাধিক রোগ ও শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।

চিকিৎসাব্যবস্থা অপ্রতুল

দেশে দুই কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এই বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসার জন্য মাত্র ১১২টি শয্যা রয়েছে, যা রোগীর তুলনায় নগণ্য। ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল হলো বারডেম।

চিকিৎসাসংকট কাটাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, এই রোগ নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে। সে সুবাদে দেশটি ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশে তেমন কেনো উদ্যোগ না থাকায় ৮০ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত। ডায়াবেটিস রোগী নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে কিডনি ও হার্টের রোগ অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল।

চিকিৎসায় ব্যয় বিশ্বে সর্বনিম্ন

আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর একজন ডায়াবেটিস রোগীর পেছনে সরকারের ব্যয় হয় ৭৫ ডলার। এটা পৃথিবীর মধ্যে সর্বনিম্ন। এমনকি পাকিস্তানও জনপ্রতি ৮৮ ডলার ব্যয় করে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যয় সাড়ে ১৭ হাজার ডলার। সুইজারল্যান্ড ব্যয় করে ২২ হাজার ডলার।

ব্যয় বরাদ্দ কম থাকায় দেশে ৬২ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হয় না। কারণ তারা রোগটি সম্পর্কে জানেই না। এ জন্য চিকিৎসা খাতে বাজেট বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে বরাদ্দ অর্থ কোন খাতে কতটুকু খরচ হবে, সে পরিকল্পনাও থাকতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্য খাতে ১৬ শতাংশ বাজেট বাড়াতে হবে। তবে বাংলাদেশে বাড়ানো হয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ। সরকারের সব খাতে উন্নতি হলেও ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ব্যয় বাড়েনি। এটি অবহেলিতই রয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুনতাসীর মারুফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শারীরিক যে রোগগুলোর সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। মানসিক রোগে আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই ডায়াবেটিসে ভোগেন।

‘অন্যদিকে ডায়াবেটিক রোগীদের মানসিক রোগ হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি। সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিস-অর্ডারসহ অন্য গুরুতর মানসিক রোগ হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তবে এ রোগের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি যে মানসিক রোগটি দেখা যায় তা হচ্ছে বিষণ্নতা। বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক নিয়ে যেসব গবেষণা রয়েছে, তার মধ্যে বিষণ্নতাই বেশি।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘ডায়াবেটিক রোগীদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ক্ষেত্রে বিষণ্নতা অন্যতম। একই সঙ্গে বিষণ্নতাও ডায়াবেটিস হওয়ার একটি কারণ। পৃথিবীতে যেসব মহামারি এসেছে, এর মধ্যে করোনা মানুষের ওপর বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে।

ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে বরাবরই বিষণ্নতার একটি প্রভাব থাকে। করোনাকালে এই হার আরও বেড়েছে। দীর্ঘদিন থেকে যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের অদূর ভবিষ্যতে নানা মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার যারা মানসিক রোগে ভোগেন তাদের ডায়াবেটিস হলে রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করাও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।’

ডায়াবেটিক রোগীর অন্যদের চেয়ে ২ থেকে ৩ গুণ বেশি হারে বিষণ্নতায় ভোগার ঝুঁকি রয়েছে। অথচ বিষণ্নতায় আক্রান্ত রোগীদের ৭০ শতাংশই চিকিৎসার বাইরে থেকে যায়। জটিল পর্যায়ে না গেলে এই রোগের চিকিৎসা নিতে চায় না মানুষ। বিষণ্নতা কমাতে হলে অবশ্যই করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবসে নানা কর্মসূচি

ডায়াবেটিস সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে প্রতি বছরের মতোই আজ সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দেশব্যাপী ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও করোনা প্রতিরোধে সচেতন হোন’।

দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৮টায় বারডেম থেকে রমনার টেনিস ক্লাব পর্যন্ত সচেতনতামূলক স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এতে ডায়াবেটিক সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেবেন।

বেলা সাড়ে ১১টায় বারডেম অডিটরিয়ামের তৃতীয় তলায় অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত থাকবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেবেন সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, রোটারি জেলা-৩২৮১ এর গভর্নর ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী ও বারডেমের মহাপরিচালক অধ্যাপক এম কে আই কাইয়ুম চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক ফারুক পাঠান।

এ ছাড়া সকাল ১০টায় বারডেম অডিটরিয়ামে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বারডেম ক্যাম্পাস এবং এনএইচএন ও বিআইএইচএসের বিভিন্ন কেন্দ্রসংলগ্ন স্থানে বিনা মূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে কান্তির বিশেষ প্রকাশনা, সচেতনতামূলক লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের চতুর্থ তলায় হার্ট ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিভাগের আরো খবর