জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে সিমেন্টের দর বাড়ার আশঙ্কা করছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।
তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের মৌলিক কাঁচামাল আমদানির জাহাজ ভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দেশীয় কারখানাগুলোতে সিমেন্ট উৎপাদন খরচও অনেক বেড়ে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে খুচরা বাজারে দাম বাড়ানো ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো পথ খোলা নেই।
সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারাদের সংগঠন সিমেন্ট বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) সভাপতি ও ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর কবির নিউজবাংলাকে বলেন, এক মাস আগেও প্রতি টন কাঁচামালের বিপরীতে জাহাজীকরণ খরচ ছিল ১৭ ডলার, যা ধারাবাহিকভাবে বাড়তে বাড়তে বর্তমানে ২৪ ডলারে উঠেছে। প্রতিদিনই এ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কাঁচামাল এবং উৎপাদিত পণ্য পরিবহন খরচও বেড়েছে।’
এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে আলমগীর বলেন, ‘একদিকে জাহাজীকরণের অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধি, অন্যদিকে তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে দেশীয় সিমেন্ট কোম্পানিগুলো ব্যাপক লোকসান দিয়ে যাচ্ছে, যা কোনভাবেই দীর্ঘদিন চলতে পারবে না। এমতাবস্থায় সিমেন্ট কোম্পানিগুলো টিকে থাকার স্বার্থে মূল্য সমন্বয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখনই যদি মূল্য সমন্বয় না করা হয় তাহলে সিমেন্ট খাত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিত হবে।’
এর ফলে এই খাতে ৪০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়বে বলে সতর্ক করে দেন তিনি।
বিসিএমএ সভাপতি বলেন, সিমেন্ট খাত থেকে প্রতি বছর শুল্ক ও কর মিলিয়ে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়ে থাকে।
আলমগীর কবির বলেন, ‘সিমেন্ট খাতে অতিমাত্রায় আয়কর এবং আমদানি শুল্ক বিরাজমান থাকায় বেশিরভাগ উৎপাদনকারী ব্যবসায় লোকসান দিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ববোর্ডে বারবার আবেদন করার পরেও কোন পরিবর্তন আসেনি। বিসিএমএ থেকে এনবিআরের চেয়ারম্যান বরাবর অনেকগুলো চিঠি দেয়া হয়েছে। এমনকি কয়েকদফা সরাসরি আলোচনা করেও যৌক্তিকতা বোঝানোর চেষ্টা করেছি আমরা। কিন্তু এনবিআর থেকে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় বড় ধরনের সঙ্ককটের মধ্যে রয়েছে এ খাতের উদ্যোক্তারা।’
ক্লিংকারসহ বাংলাদেশে সিমেন্ট তৈরির যে কয়টি মূল কাঁচামাল ব্যবহত হয় তার সবগুলোই আমদানি করা হয় বলে জানান তিনি।
বিসিএমএ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৫টির মতো দেশী বিদেশী কোম্পানি সিমেন্ট উৎপাদন করছে। দেশে বছরে সিমেন্টের চাহিদা প্রায় ৪ কোটি মেট্টিক টন। এর বিপরীতে ৮ কোটি ৪ লাখ টন উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এখাতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। এই শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে কয়েক লাখ নির্মাণ শ্রমিক, কর্মচারি ও কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন।
দেশে সিমেন্টের সমুদয় চাহিদাই মেটানেরা পাশাপাশি ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদেশেও সিমেন্ট রপ্তানি হচ্ছে। চীনে মাথা পিছু সিমেন্টের ব্যবহার গড়ে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কেজি, মালয়েশিয়ায় ৮৯০ কেজি, থাইল্যান্ডে ৬২০ কেজি, ভিয়েতনামে ৫১৮ কেজি, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ৩০৫ কেজি, শ্রীলঙ্কায় ৪১২ কেজি এবং বাংলাদেশে ২১০ কেজি।