করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় এক দিনে এক কোটি টিকা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে টিকাদানের বিশেষ ক্যাম্পেইন ছিল শনিবার। এদিন কেন্দ্রগুলোয় টিকাপ্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। টিকা নিতে দীর্ঘ লাইনের সঙ্গে ভোগান্তিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
এ অবস্থায় মানুষের আগ্রহ দেখে এই ক্যাম্পেইন আরও দুদিন বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে ভোগান্তি এড়াতে বাড়ানো হয় বুথ। ফলে এক দিনের মাথায় স্বস্তি ফিরেছে টিকাকেন্দ্রে।
রোববার রাজধানীর একাধিক টিকাকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, টিকাপ্রত্যাশীরা লাইনে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে টিকা নিচ্ছেন। ভোগান্তি ছাড়া টিকা নিতে পেরে অনেকের মুখে ছিল আনন্দের ছাপ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে চায় সরকার। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রায় ২১ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ৭৩ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় এসেছে। বাকিদের এ মাসের মধ্যে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। যে কারণে এখন নিবন্ধন ছাড়াই প্রথম ডোজ দেয়া হচ্ছে।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি গণটিকার কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, পুরুষ ও নারীরা ভিন্ন লাইনে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে টিকা নিচ্ছেন। নেই কোনো অভিযোগ ও তাড়াহুড়ো।
মোহাম্মদপুরের বসিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে গণটিকা নিতে আসা আসলাম মিয়া বলেন, ‘শনিবার টিকা নিতে আসছিলাম। ভিড় দেইখা ফিরা গেছি। আইজকা আবার আইলাম। আইজকা চাপ কম, তাই লাইন দ্রুত চলতাছে।’
কাটাসুর ৩৩ নম্বর আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে নারী-পুরুষের পৃথক লাইন দুটি ছোট। মানুষ কম বলে অনেকেই জানালেন, রোববার স্বস্তিতে টিকা নিতে পারছেন। এই কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা রিনা বেগম বলেন, ‘এখানে কোনো ঝামেলা নাই। কোনো সমস্যা নাই। সিরিয়াল অনুযায়ী যাচ্ছে। খুব সুন্দরভাবে চলছে টিকা গ্রহণ।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এক কোটি টিকা দেয়ার জন্য দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে তিনটি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এসব স্থান নির্ধারণ করেছেন। স্কুল, ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও হতে পারে।
পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে দল থাকছে। নির্ধারিত কেন্দ্রের বাইরেও প্রতি উপজেলায় পাঁচটি, প্রতি জেলায় ২০টি করে ভ্রাম্যমাণ দল থাকছে। যেখানে জনসমাগম বেশি, সেখানে যেন তারা গিয়ে টিকা দিয়ে আসতে পারে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি জোনে ৩০টি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি জোনে ৪০টি, বরিশাল, সিলেট, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহে প্রতিটি জোনে ৬০টি করে এবং খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও রংপুরের প্রতিটি জোনে অতিরিক্ত ২৫টি করে ভ্রাম্যমাণ দল থাকছে।
ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলার প্রতিটি দল ৩০০ জনকে এবং সিটি করপোরেশনের প্রতিটি দল ৫০০ জনকে টিকা দেবে। সূত্রমতে, ৬ হাজার ৫২টি অস্থায়ী এবং সাত শতাধিক স্থায়ী কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে।
করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে দেশে চলমান গণটিকাদান কাজে সহযোগিতা করছেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। একই সঙ্গে সোসাইটি তাদের নিজস্ব টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।
এই বিশেষ ক্যাম্পেইনের প্রথম দিনে ১ কোটি ২০ লাখ টিকা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। যার মাধ্যমে মোট জনসংখ্যার ৭৩ শতাংশ টিকার আওতায় এসেছে।
গণটিকার সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন স্বাস্থ্য অধিপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম।
তিনি বলেন, ‘শনিবার গণটিকার বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সেখানে বুথ ও কেন্দ্র কম থাকায় টিকা নিতে এসে কিছুটা ভোগান্তির শিকার হয়েছে মানুষ। যে কারণে সব কেন্দ্রে বুথ বৃদ্ধি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
‘রোববার স্বস্তিতে টিকা নিতে পেরেছে মানুষ। এই গণটিকা কার্যক্রম সোমবারও চলমান থাকবে। আশা করি টিকাকেন্দ্রে এমন স্বস্তির পরিবেশ থাকবে।’