বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্রোতের মতো আসছে ঋণসহায়তা, স্বস্তিতে সরকার

  •    
  • ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২০:৫৬

দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া সহায়তা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। এর আগে সাত মাসে এত বেশি বৈদেশিক ঋণসহায়তা কখনও পায়নি বাংলাদেশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসেই (জুলাই-জানুয়ারি) বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৪৬৯ কোটি (৪.৬৯ বিলিয়ন) ডলারের ঋণসহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ।

বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা) এই অর্থের পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

সাত মাসে সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন (১৭৭ কোটি) ডলার ছাড় করেছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এই অঙ্ক বিশ্বব্যাংকের দেয়া সহায়তার প্রায় চার গুণ বেশি। এ সময়ে বিশ্বব্যাংক দিয়েছে ৪৬ কোটি ২০ লাখ ডলার।

দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া সহায়তা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। এর আগে সাত মাসে এত বেশি বৈদেশিক ঋণসহায়তা কখনও পায়নি বাংলাদেশ।

এতে স্বস্তিতে রয়েছে সরকার; করোনা মহামারিকালেও অর্থসংকটে পড়তে হয়নি। ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে খুব একটা ঋণও নিতে হচ্ছে না।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) রোববার বিদেশি ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি ও ছাড়ের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।

এতে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বাংলাদেশকে ৪৬৯ কোটি ৮১ লাখ (৪.৬৯ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দাতারা। এর থেকে সামান্য কম ৪৬৯ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার (৪.৬৯ বিলিয়ন) ডলার পাওয়া গেছে।

এই সাত মাসে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা যে পরিমাণ সহায়তার প্রতিশ্রিুতি দিয়েছিল তার পুরোটাই পেয়েছে বাংলাদেশ।

ছাড় করা ঋণসহায়তার মধ্যে ৪৫৩ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার ডলার পাওয়া গেছে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে। ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার ডলার অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার খাদ্য অনুদান এবং ১৫ কোটি ৩৬ লাখ ১০ হাজার ডলার প্রকল্প অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৩২৪ কোটি ৮৮ লাখ ৩০ হাজার (৩.২৪ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করে দাতারা। সে হিসাবে এই সাত মাসে বিদেশি ঋণসহায়তা বেড়েছে ৪৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

প্রতিশ্রুতি বেড়েছে দ্বিগুণ

ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ২৪৬ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪৬ বিলিয়ন) ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দাতারা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে সেই প্রতিশ্রুতি প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

করোনা মহামারির ধাক্কা দ্রুত সামলে উঠতে দাতারা ঋণসহায়তা বাড়িয়েছে বলে জানান অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।

সংকটের সময়ে বেশি ঋণ পেয়ে খুশি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত শুক্রবারও ৩০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। শিগগিরিই এই অর্থটাও আমরা পেয়ে যাব। সত্যি বলতে কি, আমরা যতটা আশা করেছিলাম, তার চেয়েও বেশি ঋণসহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। এতে করোনার টিকা খাতে ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ মেটাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছ থেকে দ্রুত ঋণসহায়তা পাওয়া গেছে। আমরা আমাদের প্রয়োজনের বিষয়টি তাদের ভালোভাবে উপস্থাপন করেছিলাম। তারা দ্রুত সাড়া দিয়েছে; এখনও দিচ্ছে। সে কারণে করোনার ধাক্কা সামলে খুব দ্রুতই আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি; যা বিশ্বের অনেক দেশই পারেনি।’

বিদেশি ঋণের এই গতি আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন শামসুল আলম।

তিনি বলেন, ‘চলমান প্রকল্পগুলোর পাশাপাশি করোনা মোকাবিলার জন্যও মোটা অঙ্কের ঋণ পাওয়া গেছে। এখনও পাওয়া যাচ্ছে; ভবিষ্যতেও পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

‘এই ঋণসহায়তা এবং আমাদের সরকারের দেড় লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজসহ নানা উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব যতটা পড়ার কথা ছিল, ততটা পড়েনি।’

শামসুল আলম বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি করোনার আগের অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। রপ্তানি-আমদানিসহ অর্থনীতির সব সূচকই এখন ভালো। সব মিলিয়ে বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, করোনা মহামারি আমরা ভালোভাবেই মোকাবিলা করেছি। মাঝে টিকা নিয়ে একটু সমস্যা থাকলেও এখন আর নেই।

‘প্রচুর টিকা আছে; আরও আসছে। টিকার আর কোনো সংকট হবে না। আর টিকা কিনতে অর্থেরও কোনো সমস্যা হবে না।’

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিদেশি ঋণ কোভিড মোকাবিলায় সরকারকে যথেষ্ট সহায়তা দিয়েছে। পরপর দুই বছর ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি ফরেন এইড অবাক করার মতো; চলতি অর্থবছরেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।

‘এই কঠিন সময়েও সরকারকে কোনো ধরনের অর্থসংকটে পড়তে হয়নি। উন্নয়নকাজ থেমে থাকেনি; টিকা কিনতে সমস্যা হয়নি।‘

এসব কারণেই বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে করছেন আহসান মনসুর।

দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা আহসান মনসুর বলেন, ‘মহামারিকালে বাজেট সহায়তা এবং টিকা কেনার জন্য ঋণের কারণেই বিদেশি ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় বেড়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পে যে ঋণ দেয়া হয়, তার ছাড় হয় মূলত প্রকল্প বাস্তবায়নের ভিত্তিতে। বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত হলে অর্থছাড়ও হয় দ্রুত। আবার প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলে অর্থছাড়ও বিলম্বিত হয়। তবে করোনার টিকা কেনার ঋণ এবং বাজেট সহায়তার ঋণ চুক্তি হওয়ার বা প্রতিশ্রুতি পাওয়ার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ছাড় হয়।’

ইআরডির তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে টিকা কেনা এবং বাজেট সহায়তা বাবদ ইতোমধ্যে দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি ছাড় হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে এডিবি

জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে এডিবি। ম্যানিলাভিত্তিক এই উন্নয়ন সংস্থাটি ১৭৭ কোটি ডলার ছাড় করেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০০ কোটি ডলার ছাড় করেছে জাপান।

এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ৪৬ কোটি ২০ লাখ ডলার, চীন ৪৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার এবং রাশিয়া ৩৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড় করেছে।

বেশি প্রতিশ্রুতি চীনের

চলতি অর্থবছরের প্রথম জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে চীনের কাছ থেকে। এ সময়ে চীন ১১২ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে এডিবির কাছ থেকে। এই উন্নয়ন সংস্থা ৮২ কোটি ২৯ লাখ ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এ ছাড়া এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ৫১ কোটি ৫০ লাখ এবং বিশ্বব্যাংক ৭৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর জাপানের কাছে থেকে পাওয়া গেছে ৩৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি।

সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৩৫.৫৫ শতাংশ

এই সাত মাসে আগে নেয়া ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ সময়ে সরকার আসল ও সুদ বাবদ উন্নয়ন সহযোগীদের ১২২ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে। গত অর্থবছরে একই সময়ে এই পরিশোধের অঙ্ক ছিল ৯০ কোটি ডলার।

ইআরডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭১০ কোটি (৭.১ বিলিয়ন) ডলার ঋণসহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিদেশি ঋণ আসে বাংলাদেশে। ওই বছর ৭৩৮ কোটি (৭.৩৮ বিলিয়ন) ডলার ঋণ পাওয়া গিয়েছিল।

বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ বাড়তে থাকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে। ওই বছরই এক লাফে অর্থছাড় ৩০০ কোটি থেকে ৬৩৭ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। তারপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসেছিল ৬৫৪ কোটি ডলার।

এ বিভাগের আরো খবর