গাজীপুরের টঙ্গী হাজির মাজার বস্তি দখল করতে গিয়ে গাজীপুর মহানগর যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী বিল্লাল হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা বস্তিবাসীর ধাওয়া খেয়েছেন বলে জানা গেছে।
ক্ষুব্ধ বস্তিবাসী ওই যুবলীগ নেতাসহ তার সহযোগীদের স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় রাজউকের সার্ভেয়ারদের বেধড়ক কিলঘুষি মেরে লাঞ্ছিত করেছে বলে জানা যায়।
খবর পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ঘটনাস্থলে গিয়ে রাজউকের কর্মকর্তাসহ অবরুদ্ধ যুবলীগ নেতাকে উদ্ধার করেন।
শনিবার দুপুরে টঙ্গী বাজার হাজির মাজার বস্তিতে এ ঘটনার পর থেকে বস্তিবাসীর মধ্যে উচ্ছেদ আতঙ্ক বিরাজ করছে। রোববার দখলদারদের ঠেকাতে তারা সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
সরেজমিন রোববার সকালে বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, দখল ঠেকাতে বাসিন্দারা বিভিন্ন মোড়ে সংঘবদ্ধ হয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তাদের চেহারায় আতঙ্কের ছাপ। যেকোনো মূল্যে নিজেদের থাকার শেষ আশ্রয়স্থলটুকু বাঁচাতে চায় তারা।
এ সময় বস্তির বাসিন্দা আব্দুস সালাম জানান, স্বাধীনতার পর থেকে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে এ বস্তিতে বসবাস করে আসছেন। তিন মাস আগে গত ২৭ নভেম্বর ভোরে ভয়াবহ আগুনে বস্তির প্রায় পাঁচ শতাধিক ঘর ও রক্ষিত সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এ ঘটনার রেশ না কাটতেই শনিবার হঠাৎ করে যুবলীগ নেতা বিল্লাল হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে ২০-২৫ জন ক্যাডার ও রাজউকের সার্ভেয়াররা বস্তিতে এসে জায়গা মাপ শুরু করেন।
এ সময় বস্তিবাসী জায়গা মাপের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, ২০১৭ সালে রাজউক থেকে কথিত টিম গ্রুপ নামে একটি কোম্পানি দুই বিঘা জমি বরাদ্দ নিয়েছে। সেই জায়গা উদ্ধারের জন্য তারা মাপ দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করছেন।
এ খবর অন্যান্য বস্তিবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত বস্তিবাসী তাতে বাধা দেয়। একপর্যায়ে বিল্লাল মোল্লার ক্যাডার বাহিনীর সদস্য সন্ত্রাসী ইসমাইল হোসেন বস্তিবাসীর গুলি করার হুমকি দেন। এমনকি তাদের অবশিষ্ট বস্তিঘর পুড়িয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়।
এটি শুনে ক্ষুব্ধ বস্তিবাসী তাদের ধাওয়া দিয়ে হাজির মাজার ইউনিট আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে রাজউকের সার্ভেয়ারদের কিলঘুষি মেরে লাঞ্ছিত করে বস্তির লোকজন।
আরেক বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘টিম গ্রুপ ২০১৭ সালে রাজউক থেকে প্লট বরাদ্দ পাওয়ার দাবি করলেও এত বছরে কেউ কখনও দাবি নিয়ে আসেনি। তিন মাস আগে বস্তিটি আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর প্লট বরাদ্দের দাবিদারদের কার্যক্রম রহস্যজনক। এ চক্রটিই দখলের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে বস্তিতে আগুনের ঘটনা ঘটিয়েছে।’
যুবলীগ নেতা বিল্লাল হোসেন মোল্লা বলেন, ‘রাজউক থেকে প্লট বরাদ্দ পাওয়া টিম গ্রুপ আমার নিজ এলাকায় জমি ভাড়া নিয়ে ওয়্যার হাউস ও কারখানা তৈরি করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। সেই সুবাদে তাদের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে।
‘টিম গ্রুপের কর্মকর্তাদের আবদারে আমি লোকজন নিয়ে বস্তিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বস্তির লোকজন ভুল বুঝে রাজউকের সার্ভেয়ারদের ওপর হামলা চালায়।’
অভিযুক্ত বিল্লাল হোসেন মোল্লা রাজউকের লোকজনের মারধরের বিষয়টি স্বীকার করলেও তাকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন সরকার বলেন, ‘অবরুদ্ধের খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে বস্তিবাসীকে বুঝিয়ে অবরুদ্ধদের উদ্ধার করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বস্তির জায়গা যদি রাজউক কাউকে বরাদ্দ দেয়, তাহলে তারা অবশ্যই তাদের জমি বুঝে পাবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে বস্তিবাসীর পুনর্বাসন করে তবেই প্লট বুঝে নিতে পারবেন তারা।’
এ ব্যাপারে টিম গ্রুমের কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘ওই বস্তিতে আমাদের গ্রুপের দুই বিঘা জমি রয়েছে। রাজউকের কর্মকর্তা ও কোম্পানির প্রতিনিধিরা সেখানে জমি মেপে সীমানা উদ্ধারের জন্য গিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ও প্রশাসনের সঙ্গে তারা কথা বলেছে। সেখানে বস্তিবাসীর সঙ্গে কোনো ঝামেলা হয়েছে কি না আমার জানা নেই।’
টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুসারে রাজউক কিংবা অন্য কোনো কোম্পানি থানা পুলিশের কাছে সহযোগিতা চায়নি। তবে বস্তিতে জায়গা মাপতে গিয়ে ঝামেলায় পড়ে একজন ফোন করে পুলিশের সহায়তা চেয়েছেন। পরে টহল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।’