এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকে আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেড় কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা ও নিয়মিত উপবৃত্তির অর্থ। সংশয় জেগেছে, শিশু শিক্ষার্থীরা আদৌ সরকারের বরাদ্দ করা ভাতা ও উপবৃত্তির অর্থ পাবে কীনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এই অর্থ বিতরণ সম্ভব হচ্ছে না।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে অর্থ আটকে দিয়েছে। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কিছুই করার নেই। ২০২১ সালের শিক্ষা উপকরণ কেনার টাকা ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) করা আছে। এখন বিতরণকারী সংস্থার কাছে অর্থ গেলেই বিতরণ সম্ভব।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে এ মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেছি। কেন শিক্ষার্থীদের ভাতার অর্থ বিরতণ করা সম্ভব হয়নি, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দীর্ঘ এক বছর ধরে উপবৃত্তি ও ভাতা না পাওয়ায় হতাশ মো. সালাউদ্দিন নামের এক অভিভাবক।
তিনি বলেন, ‘ছেলেমেয়ের পড়ালেখার জন্য উপবৃত্তির টাকা দেয় সরকার। গত এক বছর ধরে এই অর্থ পাচ্ছি না। এতে সন্তানের শিক্ষার ব্যয় সংকুলানে বাড়তি চাপের মধ্যে আছি।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের শুরুতে এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা পড়ে আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে। সে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ২০২২ সালের শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতাও।
প্রাথমিকের ভাতার টাকা বিতরণ বিষয়ে গত বছরের ১৮ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ভাতা বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ।
বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, মোবাইল নম্বর সংক্রান্ত জটিলতার কারণে শুরুর দিকে ২ লাখ ১ হাজার ২৬৫টি অ্যাকাউন্টে ভাতা ও উপবৃত্তির অর্থ বিতরণ সম্ভব হচ্ছিল না। পরে নগদ এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষা কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এই নম্বরগুলোতে উপবৃত্তির অর্থ বিতরণ করা সম্ভব হয়।
নগদ-এর হেড অব পাবলিক কমিউনিকেশন্স জাহিদুল ইসলাম সজল বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা বিতরণের জন্য আমরা পরিপূর্ণভাবে তৈরি আছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের নির্দেশনা পেলেই সব ভাতা ও উপবৃত্তি বিতরণ সম্পন্ন করতে পারব। আমাদের ডেটাবেজও পুরোপুরি তৈরি আছে।’
প্রতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা দেয় সরকার। নানা প্রক্রিয়া শেষে মোবাইল ফাইনান্সিয়্যাল সার্ভিসের মাধ্যমে এই টাকা পাঠানো হয়।