দীর্ঘদিন ধরে বগুড়ার মাছু অ্যান্ড সন্স কারখানায় মালামাল চুরি করে বাইরে বিক্রি করা হচ্ছিল। বিষয়টি জানতেন নৈশপ্রহরী সামছুল ও হান্নান। কিন্তু চোরাই জিনিস নিয়ে হিসাবের বনিবনা না হওয়ায় খুন করা হয় দুই প্রহরীকে।
বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী রোববার দুপুর ১২টার দিকে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, বগুড়ার বিসিক এলাকার দুই নৈশপ্রহরী খুনের ঘটনায় তিন যুবককে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য উঠে আসে।
এর আগে শনিবার বগুড়ার সদর ও গাজীপুর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন বগুড়ার শাজাহানপুরের চকলোকমান এলাকার মো. হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা, সদরের বারুলী তালপট্টি এলাকার মো. সুমন ব্যাপারী ও মো. রাহাত।
এ ছাড়া হত্যায় ব্যবহৃত লোহার রড ও হান্নানের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
এসপি জানান, গ্রেপ্তারদের মধ্যে মিল্লাত পিকআপ ভ্যানচালক এবং রাহাত তার সহকারী। তারা বিভিন্ন সময়ে মালামাল কারখানায় আনা-নেয়া করতেন। আর সুমন ওই কারখানার সাবেক কর্মচারী।
এসপি সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, পিকআপচালক মিল্লাত সহকারী রাহাতকে নিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সময়ে মালামাল চুরি করে বাইরে বিক্রি করতেন। নৈশপ্রহরীরা তাদের চুরির বিষয়টি জেনে যায়।
পরে চুরির মালামাল নিয়ে তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়। কিন্তু হিসাবের বনিবনা না হওয়ায় নৈশপ্রহরীরা বিষয়টি মালিককে জানানোর হুমকি দেয়। বিষয়টি যেন জানাজানি না হয় এ জন্য তাদের খুন করা হয়।
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী সুমন ব্যাপারী জোড়া হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। গত বুধবার সাতমাথা এলাকার শহীদ খোকন পার্কে মিল্লাত ও রাহাতের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন সুমন।
পরিকল্পনা মোতাবেক বৃহস্পতিবার ভোরে তারা একত্রে কারখানায় প্রবেশ করেন। হত্যাকাণ্ড সফল করতে তাদের সঙ্গে আরও দুজন যোগ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে এসপি জানান, প্রথমে কৌশলে তারা প্রহরী হান্নানকে কারখানার সেপটিক ট্যাংকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে পেছন থেকে রড দিয়ে হান্নানের মাথায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
পরে তার মরদেহ ট্যাংকে ফেলা হয়। একইভাবে আরেক প্রহরী শামছুলকে হত্যা করে তার মরদেহও সেপটিক ট্যাংকে ফেলা হয়।
পরে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে আসামিরা অপহরণের নাটক সাজান। পরিকল্পনা মোতাবেক তারা প্রহরীদের মুক্তিপণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা চেয়ে কারখানার পরিচালকের কাছে মোবাইলে খুদেবার্তা পাঠান।
এর আগে অন্যদের পরামর্শে হান্নানের মোবাইল নিয়ে সুমন গাজীপুর চলে যান। সেখানে গিয়েই ওই খুদেবার্তা পাঠান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় জানিয়ে এসপি সুদীপ কুমার বলেন, ‘গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন তারা। না দিলে রিমান্ড আবেদন করা হবে।’