‘ফ্রেশ ডাটাই’ (তথ্য) আসল শক্তি বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বলেছেন, ‘গতকালকের পুরোনো ডাটা আজকে কেউ নেবে না। তাই তথ্য বা ডাটা যেন সঠিক সময়মতো পাওয়া যায়।’
তিনি বলেন, ‘একটা ডাটার জন্য তিন বছর, চার বছর অপেক্ষা করতে হবে, পাঁচ বছর আগের ডাটা দিয়ে চলতে হবে, এটা মানা যায় না।’
মন্ত্রী রোববার জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
মন্ত্রী বলেন, ‘ফ্রেশ ডাটাই আসল শক্তি। গতকালকের ডাটা আজকে কেউ নেবে না। দুই দিন আগের ডাটা যেমন কেউ আজ খাবে না, তেমনি, পুরোনো ডাটাও কেউ খাবে না।
‘আজকের দিনে কেউ যদি বলে ডাটা প্রসেস করতে সময় লাগছে, দেরি হচ্ছে, তাহলে সেটা মানা যায় না। এখন বড় যন্ত্র আছে, শক্তিশালী কম্পিউটার আছে, সেকেন্ডের মধ্যে কোটি কোটি ডাটা প্রসেস করা যায়। প্রয়োজনে আরও উন্নত প্রযুক্তি দেয়া হবে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারপ্রধান এর জন্য তৈরি, কিন্তু ডাটা সময়মতো পেতে হবে। তবে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করার মতো শক্তি ও সক্ষমতা বিবিএসের থাকতে হবে। বিবিএস নিজেদের আরও সক্ষম করে তুলতে হবে।'
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে ডাটাই শক্তি। ভবিষ্যতে ডাটা হবে আরও বড় দানব। দানব সম্পদও দিতে পারে, হত্যাও করতে পারে। তাই ডাটাকে ভালো কাজের ব্যবহারে লাগাতে হবে। এই কারণে দিন দিন বিবিএসের গুরুত্ব বাড়ছে।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে আন্তর্জাতিক মানের তথ্য দিতে হবে। উন্নয়নে দেশ তুলে ধরার সূচক জাতিসংঘ তুলে ধরে। সময়মতো সঠিক তথ্য দিতে হবে।'
জনশুমারি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে সেন্সাস বা জনশুমারি। সেন্সাস নিয়ে সমস্যায় পড়েছি। আমি স্বীকার করছি তা গত বছরই শেষ করার সময় ছিল। গত বছর শুরুতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এটা করার তারিখ নির্ধারিত ছিল। তবে করোনার কারণে তা পিছিয়ে যায়। এটা ছিল প্রথম ধাক্কা। দ্বিতীয় ধাক্কা ছিল আমাদের ইন্টারনাল। কিছু প্রক্রিয়ার কারণে আবার পিছিয়ে যায় শুমারি।
‘সঠিক সময়ে করতে পারিনি জনশুমারি। তবে, উদ্দেশ্য আমাদের সৎ। এ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য, নিখুঁত এবং দ্রুত করার জন্য প্রক্রিয়া নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে আমি অবহিত করেছি। আশা করছি এপ্রিল মাস নাগাদ জনশুমারি শুরু করা যাবে।'
বাংলা ভাষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া-চীন-জার্মানিরা কয়জন ইংরেজি ভাষায় কথা বলে? ইংরেজিতে কথা না বলেও পিছিয়ে নেই। জলে-স্থলে আকাশে সব জায়গায় তারা এগিয়ে। আমরা কেন বাংলা ভাষায় কথা বলে এগিয়ে যাব না। কেউ আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে ইংরেজি ছাড়া চলে না। অন্য ভাষার প্রয়োজন আছে, তার আগে অবশ্যই নিজের ভাষাকে গুরুত্ব দিতে হবে।'
এ সময় বিবিএসকে চারটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে বলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। সেগুলো হলো সঠিক ডাটা, সঠিক সময়ে ডাটা, আন্তর্জাতিক ডাটার সঙ্গে সমন্বয় এবং ডাটা তৈরিসহ প্রকাশকরাসহ সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা। দেশীয় সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমন্বয় করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক যেসব ডাটা প্রকাশ করা হয় সেগুলো করে বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। তাদের সব ডাটা আমরা উড়িয়ে দিতে পারি না। অনেক সময় আমরা দ্বিমত করি। তারপরও বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তৈরি করতে আন্তর্জাতিক সূচকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে। তাই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর যে তথ্যের ভিত্তিতে সূচক প্রকাশ করে, সেসব বিবিএসকে নজরে নিতে হবে। যেন সেই তথ্যগুলোর সঙ্গে পার্থক্য ও দূরত্ব সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায়। আপনাদের সঠিক তথ্য পেলেই আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের সঠিক তথ্য উঠে আসবে। এসব সূচককে অবজ্ঞা করা যাবে না।
‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা জরিপের ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। কৃষি শুমারি, হাউজহোল্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে ইত্যাদি।'
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিনের সভাপতিত্বে বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।