রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে একজনের খুনের তদন্তে নেমে র্যাব জানতে পেরেছে, গাঁজা সেবনকে কেন্দ্র করে এলাকার ‘জুনিয়র’ ও ‘সিনিয়র’ গ্রুপের মধ্যে বিভেদের কারণে প্রাণ হারাতে হয়েছে সেই ব্যক্তিকে।
র্যাব বলছে, এলাকায় দুটি গ্রুপ। একটি সিনিয়র গ্রুপ, অন্যটি জুনিয়র। নিহত জাহিদ হাসান জুনিয়র গ্রুপের সদস্য।
জুনিয়র গ্রুপ সিনিয়র গ্রুপের ইমরান আলীর সঙ্গে গাঁজা সেবনকে কেন্দ্র করে বাগবিতণ্ডা হলে জুনিয়র গ্রুপের পাঁচ-ছয়জন সদস্য ইমরান আলীকে চড়থাপ্পড় মারে।
এ সংবাদটি জানতে পেরে সিনিয়র গ্রুপের প্রধান ডামরু ও ডলারের নেতৃত্বে ১৫-১৬ জন সদস্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জুনিয়র গ্রুপের পাঁচ থেকে ছয়জনের ওপর হামলা করে। এ সময় নিহত হন জাহিদ, আহত হন আরও দুজন।
জাহিদ হাসান পল্লবী বেনারশিপট্টি এলাকায় সপরিবারে বসবাস করতেন। তিনি বাসচালক ছিলেন। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে পেশা পরিবর্তন করে মাছের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি বিবাহিত এবং এক কন্যাসন্তানের জনক।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া সবাই বিহারি, যারা হত্যায় সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি পল্লবী কাঁচাবাজার পেঁয়াজপট্টি এলাকায় প্রাণ হারান জাহিদ হাসান নামে একজন। ওই রাতেই তার বাবা হানিফ খান পল্লবী থানায় মামলা করেন।
এরপর র্যাব-৪ রাজধানীর পল্লবী, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে অভিযান চালিয়ে চার আসামি ইফরান ওরফে ডামরু, ডলার হোসেন, রাজা হোসেন ও মো. কোরবানকে গ্রেপ্তার করে।
রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এই মামলা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন র্যাব-৪-এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক।
কী ঘটেছিল সেদিন
র্যাব কর্মকর্তা জানান, নিহত জাহিদ ও গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি একই এলাকার বাসিন্দা। এলাকাটি অবাঙালি বিহারি ক্যাম্পের (জল্লা ক্যাম্প, মুসলিম ক্যাম্প ও মিল্লাত ক্যাম্প) আওতাধীন।
ওই এলাকায় মাদকের অপব্যবহারসহ গ্যাং কালচারের প্রবণতা রয়েছে। এই এলাকায় সিনিয়র ও জুনিয়র গ্রুপ নামে দুটি গ্রুপ রয়েছে, যারা এলাকায় চুরি-ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসা করে থাকে। গ্রুপ দুটি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে থাকে।
সেই রাতে সিনিয়র গ্রুপের মিঠুন, কামরান, ডলার, রাজা, কোরবানসহ আরও কয়েকজন হকিস্টিক, এসএস পাইপ এবং রড দিয়ে খুন হওয়া জাহিদসহ অন্যদের ওপর আক্রমণ করে।
মিঠুন, ডলার ও কামরানের এলোপাতাড়ি আঘাতে জাহিদের নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। আঘাত পায় আরও দুজন।
স্থানীয়রা আহতদের নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে জাহিদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।