শীতের ভরা মৌসুমে সবজির উচ্চমূল্য নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে, সে সময় কৃষকের হাত থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছা পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার বিষয়টি উঠে এলো সরকারের একটি গবেষণায়।
এতে দেখা যায়, উত্তরবঙ্গের জেলা গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে কোনো একটি সবজি কেজিপ্রতি ১০ টাকায় বিক্রি করলে সেটি রাজধানীর গ্রাহকদের কিনে খেতে হয় কেজিতে ৬০ টাকা করে। গাইবান্ধায় যে পণ্য ২০ টাকায় বিক্রি হয়, ঢাকায় সেটির দাম ৭০ টাকা।
কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সবজির দাম বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সচিব সায়েদুল ইসলাম। এই দাম বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করেছেন তিনি।
রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে রাজধানীতে তিন দিনের জাতীয় সবজি মেলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে গিয়ে সচিব এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সবজির দাম নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমরা একটা গবেষণাও করছি যে, কেন সবজির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা আমরা বের করতে চাই। এ পর্যন্ত যে তথ্যগুলো পেয়েছি তা হচ্ছে, সব সময় মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ থাকে মধ্যস্বত্বভোগী। তাদের কারণে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে যে সবজির কেজি ১০ থেকে ২০ টাকা, সেটা আমরা ঢাকায় ৬০ থেকে ৭০ টাকায় কিনে খাই।’
পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে শীতের ভরা মৌসুমে সবজির দাম এবার বিস্ময় তৈরি করেছে। গত বছরও কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা করে যেসব পণ্য পাওয়া যেত, তার দাম এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
শীতে ফুলকপি আকার ভেদে ১০ থেকে ২০ টাকায় মিলেছে গত বছরও। এবার ৪০ টাকার কমে পাওয়া গেছে কমই। শিম, বেগুন, টমেটো, বাঁধাকপি, গাজরসহ শীতে যেসব সবজির ব্যাপক সরবরাহ থাকে, তার প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রেই একই চিত্র দেখা গেছে।
গবেষণায় একটি বিষয় উল্লেখ করা না হলেও বিভিন্ন জেলার কাঁচাবাজারের তথ্যে আরও একটি বিষয় দেখা যায় যে, রাজধানীর তুলনায় অনেক মফস্বল শহরে সবজির মূল্য বেশি। রাজধানীতে আসতে বেশ কয়েকবার হাতবদল আর যাতায়াত ভাড়া বেশি পড়লেও মফস্বলে সেটি কম। তার পরও এত দামে কেন সবজি বিক্রি হবে, সেটি নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যে আছে প্রশ্ন।
কৃষিপণ্যে বিপণন পর্যায়ে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার বিষয়টি নিয়ে সরকার কী ভাবছে, তাও তুলে ধরেন কৃষি সচিব। বলেন, ‘জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে সংযুক্ত করে একটা কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে আমরা দেখতে পারি যে, মধ্যস্বত্বভোগী কোথায় কোথায় আছেন। কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সবজির দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারি।’
চলতি বছর শীতে দুবার বৃষ্টিতে সবজির দাম বাড়লেও আবহাওয়ার কারণে উৎপাদনে কোনো ঘাটতি হয়নি বলেও জানান সচিব। তবে ৫ ডিসেম্বরের বৃষ্টিতে কৃষকদের দ্বিতীয়বার উৎপাদনে যেতে খরচ একটু বেশি পড়েছে বলে জানান তিনি। এ কারণে এবার কৃষকের ব্যয় একটু বেশি হয়েছে বলেও উঠে এসেছে গবেষণায়।
বাজার নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমাতে আমরা কাজ করছি। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও কাজ করছে। আমরা এখন দেখতে চাচ্ছি কোন পর্যায়ে কত দাম হওয়া উচিত।’
রাজধানীতে সবজি মেলা
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে রাজধানীর খামারবাড়ির কেআইবি মিলনায়তনে সোমবার শুরু হয়ে এই মেলা চলবে আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এই আয়োজন। এতে ৫২টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে।
এ বছর মেলার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে- ‘নিরাপদ সবজি চাষ, স্বাস্থ্য পুষ্টি বারো মাস’।
গত বছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সবজি মেলার আয়োজন করা যায়নি। তার আগের বছর জানুয়ারিতে মেলায় অংশ নিয়েছিল ৬৫টি স্টল ও তিনটি প্যাভিলিয়ন। সে বছর তিন দিনের মেলায় বিক্রি হয়েছিল ৩০ লাখ টাকার সবজি।
সচিব জানান, গত ১২ বছরে দেশে সবজির উৎপাদন প্রায় সাত গুণ বেড়েছে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যমতে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয় অবস্থানে। এই তালিকায় চীন প্রথম এবং ভারত দ্বিতীয়।
কৃষি খাত থেকে জিডিপির ১৩ দশমিক ২৯ শতাংশ আসে। দেশে এখন চাষাবাদ হয় ১০০ প্রজাতির সবজি।