ভিডিও ফুটেজ থাকার পরও কেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের আটক করা হচ্ছে না- এই প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এই ক্ষোভের কথা জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আরেক মুখপাত্র পিউ মৃধা।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু সংঘবদ্ধ ধর্ষণে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই না। আমরা চাই যারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, তাদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।’
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী জেলা প্রশাসন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণাধীন ভবনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। থানায় অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ওই ছাত্রীর একাধিক সহপাঠী জানান, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নবীনবাগের হেলিপ্যাড এলাকায় দাঁড়িয়ে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলেন ওই ছাত্রী। সে সময় একটি অটোরিকশা থেকে নেমে সাত থেকে আটজন ছাত্র তাদের গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যান। সেখানে বন্ধুকে মারধর করে ওই ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
হামলার বিষয়টি সামনে এনে শনিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ আল রাজু।
শুক্রবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা মোমবাতি জ্বেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আলোর মিছিল বের করেন। ছবি: নিউজবাংলানিউজবাংলাকে রাজু বলেন, ‘পুলিশের এসপি-ডিসির সবার সামনে বৃহস্পতিবার আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সরাসরি অংশগ্রহণে বাস-ট্রাক শ্রমিকরা লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় হামলা চালান। এতে অন্তত ৫০ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।
‘শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে এলেও মারধর চালিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করেছে। উপাচার্য মহোদয় পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে বারবার ফোন দিলেও কেউ সাড়া দেয়নি।’
ওই ঘটনার পর ক্যাম্পাসের বাইরে বিভিন্ন মেসে ছাত্র-ছাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় আন্দোলন থেকে সরে আসা সম্ভব নয়। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। উনি আশ্বাস দিলে তবেই আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরব।’
রাজুর এসব অভিযোগের বিষয়ে নিউজবাংলা যোগাযোগ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. খায়রুল আলমের সঙ্গে। তিনি এ বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তিনি বলেন, ‘অভিযোগকারীর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পেলে তার ব্যাখ্যা দেয়া হবে।’
রোববার সকালের সংবাদ সম্মেলনে আবারও নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি সামনে আনেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী পিউ মৃধা বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের দ্রুত শাস্তি দিতে হবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে কথা বললে তবেই শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাব।’
‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে টানা চার দিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে রোববার দিনব্যাপী নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এসব কর্মসূচির মধ্যে আছে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল, ধর্ষণবিরোধী নাটক প্রদর্শন ও আলোর মিছিল।