‘পরশু রাতে হঠাৎই শুরু হয় বোমাবর্ষণ৷ কোথা থেকে এই বোমাবর্ষণ হচ্ছিল বুঝতে পারছিলাম না। শুধু মোবাইল ফোন আর চার্জার সঙ্গে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসি। জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নেই একটি বাংকারে। সেখানে শিশু ও বৃদ্ধাসহ আরো কমপক্ষে ৫০ জন আশ্রয় নেন।’
মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে কথাগুলো বলছিলেন মোহাম্মাদ নাজিউর রহমান। কুমিল্লার নেউরা ডুলিপাড়ার এই তরুণ বছর দেড়েক আগে পাড়ি জমান ইউক্রেনে। তার কর্মস্থল ও আবাস ছিল দেশটির রাজধানী কিয়েভে।
বাংকারে নাজিউর টানা তিনদিন অপেক্ষা করেন। সময় কাটে খেয়ে-না খেয়ে। আর এই তিনদিন তার অফিস ও যে অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন সেখানে বোমাবর্ষণ চলে। এই সময়টাতে তার একটাই ভাবনা ছিল-কীভাবে সীমান্ত পর্যন্ত যাওয়া যায়। কয়েকবার বাংকার থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এর মধ্যেই খবর পান, তার ভারতীয় মেডিকেল পড়ুয়া দুই বন্ধু বোমাবর্ষণে নিহত হয়েছেন।
নাজিউর জানান, এই ক’দিনে কিয়েভে তেমন সম্মুখযুদ্ধ হয়নি। বেশিরভাগই দূর থেকে বড় বড় স্থাপনা লক্ষ্য করে বোমা হামলা হয়েছে।
শনিবার সকালে আরো বেশ কয়েকজনের সঙ্গে ট্রেনে চেপে ইউক্রেনের সীমান্তে আসতে সক্ষম হন নাজিউর। তারপর সেখান থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পোল্যান্ডের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে যখন তিনি ট্রেনে ওঠেন ওই সময় বয়স্ক চারজন লোক ভিড়ের চাপে ট্রেনে উঠতে পারেননি।
নাজিউরের বন্ধু কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য ও রাশিয়া ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ আদনান বিন জামাল। তিনি বলেন, গত তিন দিন ধরে বন্ধু নাজিউরের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছে। দূর থেকে ওকে মানসিক সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করেছি। আজ (শনিবার) সন্ধ্যায়ও ওর সঙ্গে কথা হয়েছে। সে সুস্থ ও নিরাপদ আছে৷’
নাজিউরের আরেক বন্ধু তানভীর দিপু জানান, আদনানের (নাজিউরের ডা নাম) সঙ্গে কথা হয়েছে। এখন সে পোল্যান্ডে আশ্রয় শিবিরে আছে। ভালো আছে। তার মা ও বোন লন্ডনে আছে। তাদের সঙ্গেও আদনানের কথা হয়েছে।’