সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জের ‘পুলিশের নির্যাতনে’ উজির মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি।যার গরু চুরির মামলায় উজিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ সেই নূর উদ্দিন জানতেনই না গ্রেপ্তারের বিষয়টি। উজিরকে আটকের পর চুরির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠালেও বাদীকে কিছু জানায়নি পুলিশ।পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, গরু চুরির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে উজিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে চুরি মামলার আসামিরা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, তারা উজিরকে চেনেনই না। পুলিশের কাছে তার নামও বলেননি।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে শত্রুমর্ধন গ্রামের উজির মিয়াকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি হাসপাতালে মারা যান।উজির মিয়ার পরিবার প্রথম থেকেই অভিযোগ করে আসছে, পুলিশি নির্যাতনে মারা গেছেন তিনি। তাকে আটকের বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত বলেও অভিযোগ তাদের।শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরমপাশা ইউনিয়নের আমরিয়া গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ১৩ জানুয়ারি ওই গ্রামের নূর উদ্দিনের একটি গরু চুরি হয়। ওই দিন বিকেলেই বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাঘবেড় বাজার থেকে চুরি যাওয়া গরুসহ চারজনকে আটক করা হয়। এরপর শান্তিগঞ্জ থানার এসআই দেবাশীষ সূত্রধরকে নিয়ে বিশ্বম্ভরপুর থেকে গরু উদ্ধার করে আনেন নূর উদ্দিন। গরু চুরির অভিযোগে আটক করা হয় চারজনকে।নূর উদ্দিন তার গরুটি ফেরত চাইলে থানায় একটি অভিযোগ করার নির্দেশনা দেন এসআই দেবাশীষ। তার কথামতো ওই সময় আটক হওয়া শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নের আমরিয়া গ্রামের মোস্তাকিম মিয়া, ছাদিকুর রহমান, সালমান হোসেন, আব্দুল মোতালিবকে আসামি করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চারজনের নামে একটি অভিযোগ করেন নূর উদ্দিন।এরপর গ্রামের পঞ্চায়েতের মধ্যস্ততায় আপসে নিষ্পতিও হয় এ ঘটনার। আপসের পর আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান আসামিরা।এরপর এই মামলার ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান বাদী ও আসামিরা।
এই মামলার এক নম্বর আসামি মোস্তাকিম মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চারজনে গরু চুরি করছি। এ কারণে আমরা লজ্জিত। চুরির সঙ্গে আর কেউ জড়িত ছিল না।’তিনি বলেন, ‘উজির মিয়াকে আমি চিনিও না। তার নাম পুলিশের কাছে বলার তো প্রশ্নই আসে না।’এ ঘটনাকে পরিকল্পিত আখ্যায়িত করে আমরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘উজির মিয়াকে আমরা চিনি না, কিন্তু গরু চুরি কারা করছে এটা জানি। চোর ধরাও পড়ছে। এ ঘটনা আপসে শেষও হয়েছে। আমার মনে হয়, উজির মিয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি পরিকল্পিত।’আমরিয়া গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান শুকুর আলী বলেন, ‘এই গরু চুরি মামলা আমরা আপস করে শেষ করে দিয়েছি। বাদীও তার গরু পেয়েছে।’তবে তিনি জানান, এ ঘটনায় আসামিদের নিয়ে যখন পঞ্চায়েতরা বসেন, তখন এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে আসামিরা বলছে- আর কেউ জড়িত নয়।তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের বলছে তারা চারজনই চুরি করেছে। আর নূর উদ্দিন মানুষটা সহজ-সরল। তার কোনো শত্রু নেই। আমার মনে হয়, পুলিশ তার সরলতার সুযোগ নিয়েছে। না হলে এক মাস পর কেন আসামি ধরবে তাও অন্য ইউনিয়ন থেকে।’মামলার বাদী নূর উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশের কথায় আমি অভিযোগ দিই। এরপর গ্রামের মানুষ মামলা তুলে নেয়ার অনুরোধ করে। তাদের কথায় আমি আদালতকে আপসের বিষয়টি জানাই।উজির মিয়াকে চেনেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে নুর উদ্দিন বলেন, ‘আমি উজির মিয়াকে চিনি না, আমার গরু যারা চুরি করছে তারা হাতেনাতে আটক হয়েছে।’চার আসামি জামিন হওয়ার পর এ ঘটনায় পুলিশ আর তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি জানিয়ে নূর উদ্দিন বলেন, ‘উজির মিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টিও আমি জানি না।’নূর উদ্দিনের বাবা কাচা মিয়া বলেন, ‘আমার পোয়াটা (ছেলেটা) সহজ-সরল। এততা চিনে না। আর চুরি অইছে দরগাপাশা, ইটাপাগলায় যায় কীভাবে। এই ঘটনার সঙ্গে পাগলার কেউ জড়িত না। যারা আছিল তারা এই গ্রামেরই।’তবে এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মুক্তাদির হোসেনের সঙ্গে। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।