প্রশাসনের ‘ইন্ধনে’ গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে দ্রুত জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
শনিবার দুপুরে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ করেন বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ আল রাজু। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছেন তার মুখপাত্র তিনি।
নিউজবাংলাকে রাজু বলেন, ‘পুলিশের এসপি-ডিসির সবার সামনে বৃহস্পতিবার আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সরাসারি অংশগ্রহণে বাস-ট্রাক শ্রমিকরা লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় হামলা চালায়। এতে অন্তত ৫০ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।
‘শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে এলেও মারধর চলিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করেছে। উপাচার্য মহোদয় পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে বারবার ফোন দিলেও কেউ সাড়া দেয়নি।’
ওই ঘটনার পর ক্যাম্পাসের বাইরে বিভিন্ন মেসে ছাত্রছাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় আন্দোলন থেকে সরে আসা সম্ভব নয়। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। উনি আশ্বাস দিলে তবেই আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরব।’
হামলায় গুরুতর এক শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে
এর আগেও উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনসহ নানা ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেসব ঘটনায় জড়িতরা বিচারের আওতায় এলে ফের হামলা হতো না। তাই আমরা চাই জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।’
পুলিশের উপস্থিতিতে কীভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হলো- রাজুর এই প্রশ্নের বিষয়ে জানতে নিউজবাংলা যোগাযোগ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. খায়রুল আলমের সঙ্গে। তিনি এ বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তিনি বলেন, ‘অভিযোগকারীর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পেলে তার ব্যাখ্যা দেয়া হবে।’
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে চোখে কালো কাপড় বেঁধে এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন রাজুসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় সহপাঠীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ ঘটনায় জড়িত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী জেলা প্রশাসন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণাধীন ভবনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। থানায় অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন আন্দোলনের মুখপাত্র আব্দুল্লাহ আল রাজু
ওই ছাত্রীর একাধিক সহপাঠী জানান, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নবীনবাগের হেলিপ্যাড এলাকায় দাঁড়িয়ে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলেন ওই ছাত্রী। সে সময় একটি অটোরিকশা থেকে নেমে সাত-আটজন ছাত্র তাদের গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যায়। সেখানে বন্ধুকে মারধর করে ওই ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে।
বুধবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাজিউর রহমানের লিখিত আবেদনকে মামলা হিসেবে নেয় গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে র্যাব ও পুলিশ। তাদের মধ্যে চারজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে জেলা পুলিশ।
র্যাব যাদের গ্রেপ্তার করেছে তারা হলেন রাকিব মিয়া ওরফে ইমন, পিয়াস ফকির, প্রদীপ বিশ্বাস, নাহিদ রায়হান, হেলাল ও তুর্য মোহন্ত।
র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার আসামিরা
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে শনিবার দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘তাদের গোপালগঞ্জের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ধর্ষণে জড়িত থাকার কথা শিকার করেছে।’
তিনি বলেন, ‘রাকিবের নেতৃত্বে তারা স্থানীয় একটি অপরাধ চক্রের সদস্য। এই চক্র রাস্তাঘাটে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করত।’