বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ছাত্রীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন সময়ে রাস্তাঘাটে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করত বলে জানিয়েছে র্যাব।
এর আগে শুক্রবার বশেমুরবিপ্রবি ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এ নিয়ে ধর্ষণের এই মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে গোপালগঞ্জ থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছিলেন।
শুক্রবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৮-এর অভিযানে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, রাকিব মিয়া ওরফে ইমন, পিয়াস ফকির, প্রদীপ বিশ্বাস, নাহিদ রায়হান, হেলাল ও তুর্য মোহন্ত।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে শনিবার দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা ধর্ষণের কথা শিকার করেছেন বলে জানান তিনি।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব কমান্ডার বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা মূলত রাকিবের নেতৃত্বে স্থানীয় একটি অপরাধচক্রের সদস্য। তারা সবাই গোপালগঞ্জ ও তার আশপাশের এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা।
‘গ্রেপ্তারকৃত তুর্য মোহন্ত ছাড়া অন্যরা প্রায় ৮-১০ বছর ধরে নবীনবাগ এলাকায় বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন, আড্ডা, চুরি-ছিনতাই, জুয়াসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন। তারা বিভিন্ন সময়ে রাস্তাঘাটে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতেন। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও রয়েছে।’
ঘটনার প্রেক্ষাপট
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গ্রেপ্তারকৃতরা ইজিবাইক দিয়ে নবীনবাগ হেলিপ্যাড এলাকায় যাওয়ার পথে ভুক্তভোগীকে তার বন্ধুসহ দেখেন। পরে ইজিবাইক থামিয়ে তাদের নাম-পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন। এ সময় আসামিরা অশালীন মন্তব্য করতে থাকে। তাদের সঙ্গে ভুক্তভোগী ও তার বন্ধুদের বাগবিতণ্ডা হয়।
‘তাদের জোর করে ঘটনাস্থলের পাশে ঢালু জায়গায় নিয়ে যেতে চাইলে ভুক্তভোগীর বন্ধু বাধা দেয়। এতে গ্রেপ্তারকৃতরা তাকে মারধর করে। পরে ভুক্তভোগীকে স্থানীয় একটি ভবনে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। মূলত যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটানোর জন্যই ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তারা স্বীকার করেছে।’
গ্রেপ্তারকৃতদের পরিচয়
র্যাবের এই কমান্ডার জানান, গ্রেপ্তারকৃত রাকিব মিয়া স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলীম শেষ করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে রিসেপশনিস্ট হিসেবে চাকরি করত। এর আগে তার বিরুদ্ধে মাদক ও মারামারির মামলা রয়েছে।
পিয়াস ফকির গোপালগঞ্জের একটি পাওয়ার হাউসে দিনমজুরির কাজ করে। প্রদীপ বিশ্বাস স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে হোম সার্ভিসের মাধ্যমে এসি ও ফ্রিজ মেরামতের কাজ করত। নাহিদ রায়হান স্থানীয় একটি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
হেলাল স্থানীয় একটি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এ ছাড়া তিনি একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউশন সেলস অফিসার।
তুর্য খুলনার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৮ সালে ডিপ্লোমা শেষ করে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনার জন্য বিদেশে যায়। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ শেষ বর্ষে থাকাকালীন কোভিড পরিস্থিতির কারণে সে দেশে চলে আসে এবং গোপালগঞ্জে সদরে গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করে বলে জানা যায়। তুর্যের বিরুদ্ধে একটি মারামারির মামলা রয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আল মঈন বলেন, ‘ভুক্তভোগী ছাত্রী গ্রেপ্তারকৃতদের আগে চিনতেন না। গ্রেপ্তারকৃতরা হেলিপ্যাড এলাকায় নিয়মিত গাঁজা সেবন করতেন। তাদের বিরুদ্ধে এ-সংক্রান্তে মামলাও রয়েছে। ভিকটিম ও তার বন্ধু এই ছয়জনকে নিশ্চিত করেছেন। এখানের কেউ কেউ সরাসরি ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত, কেউ লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িত।’