বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আমি গিয়া দেখি আমার মাইয়া রাস্তায় পইরা আছে’

  •    
  • ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৩:১৯

ইচ্ছের বাবা বলেন, ‘সকালে ওর মা সাজায় দিছে বারদী যাইবো তাই। আমি না করছিলাম, কিন্তু মাইয়া বায়না ধরছিল। পরে খবর পাইলাম আমার ইচ্ছে আর নাই। আমি গিয়া দেখি আমার মাইয়া রাস্তায় পইরা আছে।’

মোটরসাইকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগায়ের বারদীর আশ্রমে যাওয়ার পথে ঢাকা-আড়াইহাজার সড়কের লেঙ্গুরদী এলাকায় শুক্রবার সকালে কাভার্ড ভ্যান চাপায় নিহত হয় ৭ বছর বয়সী শিশু ইচ্ছে রানী বর্ধণ। দুর্ঘটনায় তার চাচাতো বোন ৫ বছর বয়সী বৃষ্টি রানী বর্ধণও মারা যায়।

গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি তাদের দাদা কার্তিক বর্ধণ ও বৃষ্টির বাবা সুমন বর্ধন। দুই শিশুর বাড়ি উপজেলার মনহরদীতে।

দুর্ঘটনায় দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ুয়া একমাত্র মেয়ে ইচ্ছেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা সুজন বর্ধন। বার বার বলছিলেন, তার সব শেষ। ঘরে মেয়ের জামা জড়িয়ে আহাজারি করছিলেন।

পাশের ঘরেই ইচ্ছের মা নদী। তাদের আরেকটি সন্তান থাকলেও ইচ্ছেই ছিল তাদের সবচেয়ে আদরের।

বায়না ধরেছিল চাচার সঙ্গে বারদীতে যাওয়ার, তবে তা আর হয়ে উঠেনি।

সুজন বলেন, ‘সকালে ওর মা সাজায় দিছে বারদী যাইবো তাই। আমি না করছিলাম, কিন্তু মাইয়া বায়না ধরছিল। পরে খবর পাইলাম আমার ইচ্ছে আর নাই। আমি গিয়া দেখি আমার মাইয়া রাস্তায় পইরা আছে।’

ঘরের আরেক পাশে চিকিৎকার করে কাঁদছিলেন বৃষ্টির মা সবিতা রানী। একদিকে তিনি মেয়েকে হারিয়েছেন, আরেকদিকে তার স্বামী হাসপাতালে। তিনি যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।

নিহত দুই শিশুর পিষী (ফুফু) দিপা রানী বর্ধণ বলেন, ‘প্রতি বছরই আমাদের পরিবারের লোকজন বারদীতে যায়। অন্যান্য বছর বিভিন্ন যানবাহনে করে যাতায়াত হলেও এবার সবাই মোটরসাইকেলে করে রওনা হয়।’

দিপা বলেন, ‘দুদিন আগেই নতুন মোটরসাইকেল কিনেছিল বড় ভাই সুমন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সেই মোটরসাইকেলে ওঠে সবাই।

‘রওনা দেয়ার সময় আমার ইচ্ছে আর বৃষ্টি আনন্দ করছিল। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে খবর পাই তারা আর নেই।’

যেভাবে ঘটে দুর্ঘটনা

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোটরসাইলটি ঢাকা-আড়াইহাজার সড়কের লেঙ্গুরদী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের থেকে বারদীর শাখা রাস্তার দিকের মোড় ঘুরছিল। ওই সময় পেছন থেকে বেপরোয়া গতির কাভার্ড ভ্যানটি তাদের ধাক্কা দেয়।

তখন মোটরসাইকেল থেকে রাস্তায় পড়ে যায় সবাই। কাভার্ড ভ্যানটির চালক শিশু ইচ্ছের মাথা চাপা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। আশপাশের লোকজন চিৎকার শুরু করলে চালক গাড়ি রেখে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ইচ্ছের।

পরে বৃষ্টি, তার বাবা ও দাদাকে উপজেলা হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক বৃষ্টিকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে কাভার্ড ভ্যানটি জব্দ করে।

যা বলছে পুলিশ

আড়াইহাজার থানার উপপরির্দশক (এসআই) ইমানুর হোসেন বলেন, ‘ইচ্ছে ও বৃষ্টি নিহতের ঘটনায় কাভার্ড ভ্যানের চালক মফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে সড়ক আইনে মামলা হয়। তাকে আড়াইহাজার থেকে সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

‘কাভার্ড ভ্যানটির গতি ছিল বেপরোয়া, গাড়িটিতে যান্ত্রিক ক্রুটিও আছে। এ ছাড়া চালকের লাইসেন্সও হয়নি।’

এ বিভাগের আরো খবর