ঠাকুরগাঁওয়ের বেশ কিছু অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। তবে পৌরসভার রোড এলাকায় এত প্রবল শিলাবৃষ্টি হয়েছে যে মুন্সিরহাট বাগানবাড়ি গ্রামে এর ভয়বহতা দেখা গেছে।
শুক্রবার বিকেলের ওই ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে বাগানবাড়ি গ্রাম ও এর সংলগ্ন এলাকার কয়েক হাজার একর বাগানের লিচু ও আমের মুকুল ঝরে পড়েছে। শুধু তা-ই নয়, গাছের পাতাও এমনভাবে ঝরেছে যে দেখে মনে হচ্ছে- কেউ সবুজ গালিচা বিছিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামটির ৮০ শতাংশ মানুষ ফল ব্যবসায়ী। লিচু ও আমই তাদের ফসল।
স্থানীয় শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘এ কেমন শিলাবৃষ্টি! আমার জন্মে আমি ঠাকুরগাঁওয়ে এমন দেখিনি৷ আমার বাড়ির সামনে বরফ জমেছে এক হাঁটু। এই গ্রামের মানুষ লিচু ও আমের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু শিলাবৃষ্টি মানুষগুলোকে পথে বসিয়ে দিল।’
লিচু ব্যবসায়ী আইনুল হক বলেন, ‘শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় আমার ৬০০ লিচু গাছের মুকুল, এমনকি পাতাও ঝড়ে গেছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। বাগানমালিককে টাকাও দিয়েছি। আমার কমপক্ষে ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি ঋণগ্রস্ত।’
দুঃখ করে ব্যবসায়ী মিলন বলেন, ‘মুকুল ভরা গাছে এখন আকাশ দেখা যাচ্ছে। সব ঝরে গেছে। আমাদের পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
চাঁপাই থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যবসা করতে এসেছেন রিপন মিয়া। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর লিচুর ব্যবসা করতে আমরা অনেকেই এই এলাকায় আসি। এবারেও এসেছি। মুকুলে ভরা বাগান দেখে অনেক দাম দিয়ে বাগান কিনেছে। সকালেই বায়না করেছি। বিকেলেই সব ঝরে গেল। আমি এখন কী করব?’ স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘হামার সব স্বপ্ন ঝরে পড়ছে বাপু। হামার আর কিছুই নাই। এমন পাথর বৃষ্টি আসমান থেকে এই প্রথম পড়িল।’
জেলা সদরের রুহিয়া, ভুল্লি, ঢোলারহাট, রায়পুরসহ আরও কয়েকটি স্থানে দমকা হাওয়া ও শিলাবৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে।
শিলাবৃষ্টির কারণে গম, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলেরও বিপুল ক্ষতি হয়েছে। ব্যাহত হয়েছে স্বাভাবিক চলাফেরা। এলাকাজুড়ে নেই বিদ্যুৎ। অনেক বাড়ির টিনও শিলাবৃষ্টিতে ফেটে তছনছ হয়ে গেছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, ‘জেলায় বিভিন্ন স্থানে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে আমের মুকুল, ভুট্টা ও গমের ক্ষতি হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে জানতে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
এদিকে রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জসহ এই অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায়ও হঠাৎ শিলাবৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় শিলার স্তুপ জমে গেছে। দমকা ও ঝড়ো হাওয়ায় গাছ-পালা ও ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
শুক্রবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে আবহাওয়ার এমন উপদ্রব শুরু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। হঠাৎ এমন দুর্যোগে বিপাকে পড়তে হয় অসংখ্য পথচারীকে।
রংপুর বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় এভাবেই শিল পড়েছেরংপুরের কামাল কাচনা বাজারের ব্যবসায়ী আজহার আলী চৌধুরী বলেন, ‘উত্তরের আকাশ একটু মেঘলা ছিল। দোকানে বসে আছি, হঠাৎ ঝড়ো বাতাস শুরু হলো। রাস্তার ধুলায় সব অন্ধকার হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার ঠিক হয়ে যায়।’
রংপুরের ভিন্নজগৎ এলাকার কৃষক মহিউদ্দিন বলেন, ‘জমিত বসি কাজ করোছি, একনা একনা আকাশ খারাপ আছি। বৃষ্টির সাথে বড় বড় শিল পড়া শুরু হইল। অনেকক্ষণ ধরি এই শিল আর বৃষ্টি হইছে।’
আরেক কৃষক রমজান আলী জানান, শিলাবৃষ্টির কারণে বাড়ন্ত ধান গাছ হেলে পড়েছে, ভেঙে গেছে।
রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, শিলাবৃষ্টি হয়েছে, তবে ক্ষয়-ক্ষতির কোনো তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকলে তা যাচাই বাছাই করে সহযোগিতা করা হবে।