নদী-খাল-বিল-পুকুরে দেশে বছরে ১৪ থেকে ১৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। এই মৃত্যু ঠেকাতে শিশুদের সাঁতার শেখানোসহ একটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার, যাতে গড়ে তোলা হবে আট হাজারের বেশি শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র। প্রতি কেন্দ্রে ২৫ জন শিশুকে রেখে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকবে।
শিশুদের সাঁতার শেখানো হবে পুকুরে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন পুকুরকেই বেছে নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দিবাযত্নকেন্দ্রগুলো হবে গ্রামে বাড়ির উঠানে।
কীভাবে শিশুদের নিরাপদে এসব কেন্দ্রে রাখা যায়, তার একটি মডেল প্রকল্প আছে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে। সেই অভিজ্ঞতা হাতে-কলমে শিখতে সরকার ১৬ জন কর্মকর্তাকে পাঠাবে দেশটিতে। প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশে ফিরে এ প্রকল্পের একটি মডেল তৈরি করবেন তারা। পাশাপাশি শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র যারা পরিচালনা করবেন, তাদের প্রশিক্ষণ হবে দেশে।
দেশে যত শিশুর মৃত্যু হয়, তার মধ্যে প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। দ্বিতীয় অবস্থানেই আছে পানিতে ডুবে মৃত্যু। প্রতিদিন এভাবে গড়ে মারা যায় ৪০ শিশু, যাদের বেশির ভাগের বয়স ১০ বছরের নিচে। বছর শেষে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ১৪-১৫ হাজার।
সরকার মনে করে, উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ও সাঁতার শিখিয়ে এ মৃত্যু ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। তাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শিশুদের সাঁতার শেখানোর পাশাপাশি তাদের দিনের একটা সময় শিশু দিবাযত্নকেন্দ্রে রাখার চিন্তা করা হয়।
এই প্রকল্পে শিশুদের সাঁতার শেখানো আসলে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ। প্রথম পর্যায়ে দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত তিন বছর শিশুদের দিবাযত্নকেন্দ্রে রেখে তার শৈশবের প্রারম্ভিক বিকাশের সুযোগ করে দেয়া। সেখানে নিরাপদে থাকার পাশাপাশি তার বিনোদন ও পুষ্টি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকবে। সাঁতার শেখানো হবে ছয় বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নার্গিস খানম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রামের বাচ্চাদের সুরক্ষায় আমরা নতুন একটি মডেল করতে যাচ্ছি। কারণ যার শিশু মারা যায়, সেই বোঝে কী কষ্ট। ব্লুমবার্গ ও আরএনএলআই থাকবে এ প্রকল্পে, তারা দেখাশোনা করবে। তাই এটি একটি আদর্শ প্রকল্পই হবে।’
কতজনকে প্রশিক্ষণ, খরচ কত
গোটা প্রকল্পটি ২৭১ কোটি টাকার। এ জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। সেখানে যাবেন মোট ১৬ জন কর্মকর্তা। অর্থাৎ একেকজন কর্মকর্তার পেছনে ব্যয় হবে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা।
ভবিষ্যতে বিদেশে কোথাও সেমিনার বা এই ধরনের আয়োজনে অংশ নিতে হয়, সে জন্যও বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২০ লাখ টাকা।
প্রশিক্ষণের ব্যয় আরও বেশি, মোট ১১ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের প্রায় সবটাই হবে দেশে। এই প্রশিক্ষণে শিশুদের সাঁতার শেখানো ছাড়াও থাকবে দিবাযত্নকেন্দ্রে তাদের সঙ্গে আচরণ কেমন হবে, সেটি শেখানো।
এই প্রকল্পে শিশুদের সাঁতার শেখানো আসলে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ। প্রথম পর্যায়ে দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত তিন বছর শিশুদের দিবাযত্নকেন্দ্রে রেখে তার শৈশবের প্রারম্ভিক বিকাশের সুযোগ করে দেয়া। সেখানে নিরাপদে থাকার পাশাপাশি তার বিনোদন ও পুষ্টি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকবে। সাঁতার শেখানো হবে ছয় বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত।
ভারতের মডেল শিখে এসে ১৬ কর্মকর্তা দেশে প্রশিক্ষণ দেবেন ৬২৪ জনকে। এরা পরে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করবেন। তারা ১৬ হাজার মাকে প্রশিক্ষণ দেবেন, যারা দিবাযত্নকেন্দ্রে শিশুদের দেখভাল করবেন।
আর শিশুদের সাঁতার শেখাবেন যে ১ হাজার ৬০০ জন, তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন সাঁতারুরা।
সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে এই প্রকল্প নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। সাঁতার শেখাতে কেন বিদেশে পাঠাতে হবে- এমন প্রশ্ন তুলছে হাজার হাজার মানুষ। আর সেই প্রতিবেদনে বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যয় ৫০ কোটি টাকা উল্লেখ করার পর এই প্রশ্ন আরও বড় হয়েছে।
বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যয় ৩০ লাখ টাকা। তবে সামগ্রিক ব্যয় আরও বেশি, মোট ১১ কোটি টাকা। এর প্রায় সবটাই হবে দেশে। এই প্রশিক্ষণের শিশুদের সাঁতার শেখানো ছাড়াও থাকবে দিবাযত্নকেন্দ্রে তাদের সঙ্গে আচরণ কেমন হবে, সেটি শেখানো। ভারতের মডেল শিখে এসে ১৬ কর্মকর্তা দেশে প্রশিক্ষণ দেবেন ৬২৪ জনকে। এরা পরে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করবেন। তারা ১৬ হাজার মাকে প্রশিক্ষণ দেবেন, যারা দিবাযত্নকেন্দ্রে শিশুদের দেখভাল করবেন। আর শিশুদের সাঁতার শেখাবেন যে ১ হাজার ৬০০ জন, তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন সাঁতারুরা।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য নাসিমা বেগমকে উদ্ধৃত করে একটি গণমাধ্যম লিখেছে, ‘দুইটি টিমে ৮ জন করে ১৬ জন কর্মকর্তা বিদেশ যাবেন। এর জন্য ব্যয় হবে ৩০ কোটি টাকা।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে মিড কোড করা হয়েছে। এমনটি আমি বলিনি।…আমি যা বলিনি তা লিখবে কেন? বক্তব্য লেখার সময় আরও সংযত হয়ে লেখা উচিত। তবে এ নিয়ে আর কথা বলতে চাই না।’
কেন ভারতে প্রশিক্ষণ
প্রশিক্ষণের জন্য ভারতকে বেছে নেয়ার কারণ দুটি। প্রথমত, প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় সেখানে খরচ অনেক কম। দ্বিতীয়ত, সেখানে এই ধরনের একটি পরীক্ষিত মডেল রয়েছে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নার্গিস খানম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভারতে আরও আগে থেকেই ব্লুমবার্গের অর্থায়নেই একটা মডেল রয়েছে, যার নাম আঙ্গনওয়াড়ি মডেল বা উঠান মডেল। এখানে ছোট একটি এলাকার পরিবারগুলো মিলে কারও উঠানে শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র পরিচালনা করে। এই মডেল কীভাবে কাজ করছে, কী কী সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে ইত্যাদি দেখতে যাবেন কর্মকর্তারা।’
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য নাসিমা বেগম বলেন, ‘চাইল্ড কেয়ারের বিষয়টিতে কর্মকর্তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে এই বিদেশ সফরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিশুদের কীভাবে ডে-কেয়ারে রেখে সুন্দর লাইফ দেয়া যায়, সেটাই দেখতে যাবেন তারা। কারণ আমরা অনেকেই শিশুদের সঙ্গে যে আচরণ করি, তেমনটি করা উচিত না। তাদের শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশের জন্য সুন্দর ও উপযুক্ত ব্যবহার করতে হবে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে তিনটি কৌশল সবচেয়ে কার্যকর। এক. পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী শিশু-যত্নের ব্যবস্থা করা। দুই. সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় জোর দিয়ে ৬-১০ বছরের শিশুদের সাঁতার শিক্ষার ব্যবস্থা করা। তিন. শিশুদের নিরাপত্তাঝুঁকি এবং তা হ্রাস করার পদ্ধতি সম্পর্কে জনসাধারণ, মা-বাবা ও অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তিনটি প্রতিরোধ কৌশলই অন্তর্ভুক্ত করে ১৬টি জেলায় ৪৫টি উপজেলায় এই প্রকল্প পরিচালনা করা হবে।
প্রকল্পের বিস্তারিত
প্রকল্পটির নাম ‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু দিবাযত্নকেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা প্রদান’। এটি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প, যেটির বাস্তবায়ন করবে শিশু একাডেমি।
এতে শিশুদের সাঁতার শেখানোর জন্য দেশে প্রায় দেড় হাজার প্রশিক্ষক তৈরি করা হবে। পাশাপাশি প্রায় আট হাজার দিবাযত্নকেন্দ্রও তৈরি করা হবে।
একেকটি দিবাযত্নকেন্দ্রে দিনে রাখা হবে ২৫টি শিশুকে। তাদের দেখভালের মূল দায়িত্বে থাকবেন সেই শিশুদের মায়েদের মধ্য থেকে দুজন। এ দুজনকে দেয়া হবে বিশেষ প্রশিক্ষণ, দেয়া হবে ভাতাও।
গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে কার্যক্রমের আওতায় আসবে সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি শিশু।
এই প্রকল্পের অর্থিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিজ ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউট (আরএনএলআই)।
মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে দেড় থেকে ১০ বছরের শিশুরা। এর মধ্যে বেশি শিশু মারা যায় দেড় থেকে দুই বছরে। কারণ এ সময় তারা হাঁটাচলা শেখে, চোখের পলকে এদিক-সেদিক চলে যায়। এ জন্য শিশুদের বয়সকে দুই ভাগ করে তাদের আলাদা ব্যবস্থাপনায় আনা হবে।
প্রকল্পটির নাম ‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু দিবাযত্নকেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা প্রদান’। এটি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প, যেটির বাস্তবায়ন করবে শিশু একাডেমি। এতে শিশুদের সাঁতার শেখানোর জন্য দেশে প্রায় দেড় হাজার প্রশিক্ষক তৈরি করা হবে। পাশাপাশি প্রায় আট হাজার দিবাযত্নকেন্দ্রও তৈরি করা হবে।
এর মধ্যে এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের দিবাযত্ন কেন্দ্রে পরিচর্যায় রাখা হবে। এতে তারা পানিতে পড়ার ঝুঁকি থেকে যেমন বাঁচবে, তেমনি বাঁচবে অন্যান্য আঘাত ও আঘাতজনিত মৃত্যু থেকে।
আর পাঁচ থেকে ১০ বছর বয়সের শিশুরা একটু বড়। তারা স্কুলসহ অন্যান্য কাজে বাইরে যাবেই। তাই তাদের সাঁতার শিখিয়ে সুরক্ষা দেয়া হবে। এতে তাদের মৃত্যুঝুঁকি অনেক কমে আসবে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) নার্গিস খানম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, মায়েরা বাসায় কাজ করছে, তখন শিশু হেঁটে ঘরের বাইরে গিয়ে পুকুর বা ডোবায় পড়ে যায়। কর্মজীবী মায়েদের শিশুদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। এ জন্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের গ্রামীণ পরিবেশেই দিবাযত্নকেন্দ্রে রাখা হবে। তাদের দেখাশোনার জন্যও মানুষ থাকবে, আবার সবার সঙ্গে মিশে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশও ঘটবে।’
কেমন হবে দিবাযত্নকেন্দ্রগুলো
নার্গিস খানম জানান, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে গ্রাম এলাকায় কাজ করা এনজিওগুলোর মাধ্যমে। দিবাযত্নগুলো হবে একেবারেই কমিউনিটিভিত্তিক। স্বেচ্ছা অংশগ্রহণের ভিত্তিতে কারও উঠান বা বাসাকে বেছে নেয়া হবে।
শিশুদের জন্য খেলনার ব্যবস্থা থাকবে সেখানে। গ্রামের শিশুরা যেসব উপকরণ দিয়ে খেলে, সেগুলোই রাখা হবে সেখানে। সেবাদানকারীরা বাচ্চাদের সঙ্গে খেলবেন, গান করবেন, তাদের শৈশবের বিকাশে সাহায্য করবেন।
নার্গিস খানম বলেন, ‘কোনো মা-বাবা হয়তো মাঠে কাজ করছেন, ঘরের কাজ করছেন। কিন্তু তার বাচ্চা আর ঝুঁকিতে থাকল না। পরিচিত বাচ্চাদের সঙ্গে খেলেই বড় হবে সে।’
কেবল সময় কাটানো বা নিরাপদে রাখা নয় নয়, শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিতেও এই প্রকল্প ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘বাচ্চার সুন্দর বিকাশের জন্য কীভাবে তার সঙ্গে আচরণ করতে হবে, তাদের সুষম খাবার কেমন হবে, তা নিয়েও মায়েদের সঙ্গে সেশন থাকবে।’
দিবাযত্নগুলো হবে একেবারেই কমিউনিটিভিত্তিক। স্বেচ্ছা অংশগ্রহণের ভিত্তিতে কারও উঠান বা বাসাকে বেছে নেয়া হবে। শিশুদের জন্য খেলনার ব্যবস্থা থাকবে সেখানে। গ্রামের শিশুরা যেসব উপকরণ দিয়ে খেলে, সেগুলোই রাখা হবে সেখানে। সেবাদানকারীরা বাচ্চাদের সঙ্গে খেলবেন, গান করবেন, তাদের শৈশবের বিকাশে সাহায্য করবেন।
সাঁতার শেখানো ও শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র কেন প্রয়োজন
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭-এর তথ্য বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৪ হাজার ৩০০টি শিশুর মৃত্যু হয়। এর পরেই রয়েছে পানিতে পড়ে মৃত্যুর সমস্যা।
২০১৬ সালে করা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বছরে প্রায় ১৪ হাজার ৪৩৮টি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৪০ জনের মতো।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পানিতে ডুবে মৃত্যুর শতকরা ৮৮ ভাগ পর্যন্ত প্রতিরোধ করা সম্ভব।
২০১৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও দুর্ঘটনা সমীক্ষা বলছে, বাংলাদেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে। এই মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটে বাড়ির ২০ মিটারের মধ্যে জলাধারে এবং দিনের প্রথমভাগে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে তিনটি কৌশল সবচেয়ে কার্যকর। এক. পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী শিশু-যত্নের ব্যবস্থা করা। দুই. সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় জোর দিয়ে ৬-১০ বছরের শিশুদের সাঁতার শিক্ষার ব্যবস্থা করা। তিন. শিশুদের নিরাপত্তাঝুঁকি এবং তা হ্রাস করার পদ্ধতি সম্পর্কে জনসাধারণ, মা-বাবা ও অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তিনটি প্রতিরোধ কৌশলই অন্তর্ভুক্ত করে ১৬টি জেলায় ৪৫টি উপজেলায় এই প্রকল্প পরিচালনা করা হবে। সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয়, এমন উপজেলাগুলোই বেছে নেয়া হয়েছে।