যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানার পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) মো. শামসুদ্দোহাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
ফরিদপুরের ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর রাজাবাজার থেকে শামসুদ্দোহাকে গ্রেপ্তার করে গুলশান থানা পুলিশ।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল এসব তথ্য জানিয়েছেন।
৪০ বছর বয়সী শামসুদ্দোহার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার পশ্চিম গোপীনাথপুর গ্রামে। তিনি ঢাকার খিলক্ষেত এলাকার বিকন লেক সিটির কনকর্ড টাওয়ারে থাকতেন।
ওসি জলিল জানান, শামসুদ্দোহা চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানায় পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) হিসেবে কর্মরত। স্ত্রী ফারজানা খন্দকার তুলির করা নারী নির্যাতন মামলায় তাকে ঢাকার রাজাবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) আবুল খায়ের গুলশান থানা থেকে সকালে তাকে ফরিদপুরে আনেন।
ওসি জলিল আরও জানান, শামসুদ্দোহার স্ত্রী ফারজানা খন্দকার তুলি ৯ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় তার বিরুদ্ধে যৌতুক দাবি, মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে ফারজানা বলেন, ‘২০১৫ সালের ৭ আগস্ট পারিবারিকভাবে শামসুদ্দোহার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আমি ফরিদপুরে আমার বাবার বাড়িতেই অবস্থান করি। ওই বছরের নভেম্বরে শামসুদ্দোহা তার কর্মস্থল যশোরে নিয়ে যায় আমাকে। এর কিছুদিন পর থেকেই তার আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করি।’
ফারজানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যশোর গিয়ে জানতে পারি, অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে তার বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। বাধা দিলে ওই সময় থেকেই আমার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। বিভিন্ন সময় আমাকে মারপিট করত শামসুদ্দোহা।’
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন পর আমাকে তার প্রমোশনের জন্য ৭০ লাখ টাকা বাবার কাছ থেকে এনে দিতে বলে। আমি তখন ১৫ লাখ টাকা এনে দিই। তাতে সে খুশি হয়নি। এরপর নির্যাতন বাড়তে থাকে। প্রতিদিন নেশা করে এসে আমাকে মারপিট করত।
‘একপর্যায়ে আমি সেখান থেকে শহরের গোয়ালচামটে বাবার বাড়ি চলে আসি। তখন আমি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। বাবার বাড়িতেই আমি পুত্রসন্তানের মা হই। সন্তানের বয়স এখন দুই বছর। সন্তানের মুখ পর্যন্ত এখনও দেখেনি শামসুদ্দোহা।’
ফারজানা আরও বলেন, “বাবার বাড়িতে আসার পর সে আমাকে ফোনে বলে, ‘টাকা নিয়ে আসতে পারলে আসো, তা না হলে আসার দরকার নেই।’ নিরুপায় হয়ে আমি থানায় মামলা করি।”
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান জানান, স্ত্রীর মামলায় গ্রেপ্তার পরিদর্শক শামসুদ্দোহাকে বিকেলে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।