ক্ষমতাসীনরা জনসমর্থন হারিয়েছে দাবি করে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তিকে ক্ষমতায় আনার সময় এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির দ্বাদশ কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
সেলিম বলেন, ‘গোষ্ঠীগত লুটপাটের স্বার্থে এবং অপরাধের বিচার থেকে রেহাই পেতে ক্ষমতাসীনরা জোর করে আসন দখল করে রেখেছে। জনসমর্থনের বদলে তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা বের করেছে। আর এ কাজে তাদের অবলম্বন আমলাতন্ত্র ও রাষ্ট্রযন্ত্র।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা কালাকানুন জারি করে মানুষের কণ্ঠ রোধ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘খুন, জেল, জুলুমের সন্ত্রাসী শাসন কায়েম করা হয়েছে। দেশে এখন ভয়ের রাজত্ব চলছে। ফলে সমাজ ও রাজনীতিতে বিকল্প বাম গণতান্ত্রিক শক্তির সংগ্রামী ও কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আজ সময় এসেছে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার।’
তিনি বলেন, ‘আমরা রক্ত দিয়ে সামরিক শক্তিকে প্রতিহত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলাম। গণতন্ত্রকে আজ আবারও হরণ করা হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচনকে আজ প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে।
জনগণের সামনে এখন চারটি প্রধান বিপদ বলে উল্লেখ করেন তিনি। এগুলো হলো- সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ, লুটপাটতন্ত্র ও গণতন্ত্রহীনতা। এর থেকে উত্তরণ জরুরি বলে মনে করেন সিপিবির এই নেতা।
ভোটাধিকারের সংগ্রাম করেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল জানিয়ে উদ্বোধনী অধিবেশনে সিপিবির উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে। তাদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিরঙ্কুশ দুর্নীতির জন্ম দিয়েছে। দেশের সব জায়গায় ওপর থেকে নিচে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। গোটা সমাজব্যবস্থায় দুর্নীতির ঘুণ ধরেছে।
‘ভোটের আগের রাতেই বাক্স ভরে আওয়ামী লীগ নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছে। ভুয়া ভোটে নির্বাচিতরা দেশ শাসনের নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলা করতে সবার আগে ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।’
ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র সুনিশ্চিত করেই বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের পথে এগিয়ে যাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি।
অধিবেশনে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘সরকারের বাইরে যে বুর্জোয়া দলগুলো রয়েছে তারাও একই বাজারসর্বস্ব পুঁজিবাদী পথ এবং লুটপাটতন্ত্রের নীতির অনুসারী। বুর্জোয়া দলগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তুলতে হবে। শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত ও দেশপ্রেমিক মানুষের স্বার্থে বিকল্প রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়তে হবে।’
জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দ্বাদশ কংগ্রেসের উদ্বোধন করেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম।
উদ্বোধনের পর কাজী বশির মিলনায়তনে উদ্বোধনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
অধিবেশনে সিপিবি নেতারাসহ আরও উপস্থিত আছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকসহ বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্য নেতারা।
বিকেল ৩টা থেকে কংগ্রেসের সাংগঠনিক অধিবেশন শুরু হয়েছে। চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল পর্যন্ত।