বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘অপমানে’ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যাচেষ্টা, ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি

  •    
  • ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১২:৫৮

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থীর জন্মপরিচয় নিয়ে শিক্ষক প্রশ্ন তুলতে পারেন না। ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না তাও তদন্ত করা হবে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে সব পরিষ্কার হবে।’

ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপকের কথায় ‘অপমানিত হয়ে’ ফেসবুক লাইভে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমেদ উল বারীকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়। অন্য সদস্যরা হলেন, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. তপন কুমার সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার প্রধান।

শুক্রবার সকালে এ কমিটি গঠনের বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. সাইফুল কবির।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের জয় বাংলা ভাস্কর্য ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের মহাসড়কও অবরোধ করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দিলে ক্যাম্পাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।

রেজিস্ট্রার বলেন, ‘আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ওই শিক্ষার্থীর নাম শামীম সিদ্দিকি। তিনি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।

আত্মহত্যার চেষ্টা করা ওই ছাত্র ময়মনসিংহ মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। ছবি: নিউজবাংলা

গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় ফেসবুক লাইভে এসে ওই শিক্ষার্থী জানান, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মেহেদী হাসান তার কাছে বাবার পেশা, পদবি ও বয়স জানতে চান। শিক্ষার্থী জানান, তার বাবার বয়স ৪৫ বছর, তিনি পেশায় শিক্ষক।

উল্টো শিক্ষক প্রশ্ন করেন, তাহলে তোমার বয়স কত? এভাবে শিক্ষার্থী ও তার বাবার বয়সের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

এরপর লাইভে ওই ছাত্রকে কয়েকটি ঘুমের ওষুধ খেতে দেখা গেছে। পরে তিনিই লাইভ কেটে দেন। এর পর সহপাঠীরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় তাকে।

এ ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের জয় বাংলা ভাস্কর্য ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের মহাসড়কও অবরোধ করেন। ওই শিক্ষকের বিচার দাবিতে মানববন্ধনও শেষে রাত দশটার দিকে তারা সরে যান।

শুক্রবার সকালে নিউজবাংলাকে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্যার আগে থেকেই আমাকে পছন্দ করতেন না। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে তিনি আমাকে অপমান করেছেন। স্যারের অফিসের সামনে গিয়ে যদি দেখি দরজায় তালা ঝুলানো, তখন স্যারকে ফোন দিলে রাগান্বিত কণ্ঠে বলেন, ফোন দিয়েছ কেন? আমি কি চলে গেছি নাকি? আবার ফোন না দিলে বলেন, আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখো না কেন?’

এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগ-কর্মী। বৃহস্পতিবার দুপুরে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে গেলে বলেন, তুমি তো রাজনীতি কর, ছাত্রলীগ কর, আর আওয়ামী লীগও কর, কেউ তোমাকে কিছু দেবে না। তখন আমার ১৫ জন সহপাঠী উপস্থিত ছিলেন। এরপর আমার জন্মপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।’

কতটি ট্যাবলেট খেয়েছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকের কথায় মনে প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছি। এ জন্য দোকান থেকে ঘুমের ২০ পিসের দুই পাতা ট্যাবলেট কিনে আনি। এরপর বিকেলে ফেসবুক লাইভে এসে সবাইকে জানিয়ে ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম। তখন ১৩টি ট্যাবলেট হাতে নিলেও খেয়েছি ৫ থেকে ৬টি।’

অভিযোগের বিষয়টি জানতে চাইলে সহযোগী অধ্যাপক শেখ মেহেদী হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নিজেও আওয়ামী লীগ করি। তাকে (শিক্ষার্থী) শুধু বলেছিলাম, রাজনীতি করলে ভালো করে কর। কারণ যেটাই করতে হয়, ভালো করেই করতে হয়।’

শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টার পর প্রশাসনিক ভবনের সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তার সহপাঠীরা। ছবি: নিউজবাংলা

জন্মপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,‘ আমি কখনও এমন অবান্তর প্রশ্ন করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কিংবা ছাত্রদের বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর অতিউৎসাহী বন্ধুদের কারণে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, তদন্ত করলেই এর প্রমাণ মিলবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই ছাত্র আমাদের ছাত্রলীগের কোনো পদে নেই। মিটিং-মিছিলে অংশগ্রহণ করেছে কি না তাও জানি না। শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। ঘটনাটি ভালো করে তদন্ত প্রয়োজন।’

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন জানান, ‘ওই ছাত্রকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। তাৎক্ষণিক তাকে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থীর জন্মপরিচয় নিয়ে শিক্ষক প্রশ্ন তুলতে পারেন না। ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না তাও তদন্ত করা হবে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে সব পরিষ্কার হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর