পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ শুধু একটি ঘটনা নয়। কিছু বিপথগামী বিডিআর সদস্য বিদ্রোহ করল, আর সেনা কর্মকর্তারা মারা গেলেন- এমনটা মানতে চান না নিহতদের স্বজনরা।
তারা জানতে চান, এই বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা ছিলেন? তাদের চিহ্নিত করতে পৃথক সুপ্রিম জুডিশিয়ারি কমিশন গঠনের দাবি রয়েছে স্বজনদের পক্ষ থেকে।
পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নিহত সেনা সদস্যদের ১৩তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সকালে বনানী সামরিক কবরস্থানে আসেন স্বজনরা।
রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া করেন সেনা সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা। এ সময় বিচারের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তারা।
নিহত কর্নেল কুদরত-ই-এলাহীর ছেলে সাকিব রহমান। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা ছিল, তাদের শনাক্ত করা হলো না। আজকে যাদের বিচার হচ্ছে, তাদের যদি ফাঁসিও হয়, আমি বলব এটা রেগুলার বিচার কার্যক্রম। যেকোনো ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রেই সেটা হওয়ার কথা। এখানে কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা পর্দার আড়ালেই রয়ে গেল।’
ষড়যন্ত্রকারীদের বের করে আনতে পৃথক সুপ্রিম জুডিশিয়ারি কমিশন গঠনের দাবি জানান তিনি। এ দাবি শহীদ পরিবারগুলো করে আসছে বলে জানান সাকিব।
তিনি বলেন, ‘আমরা শহীদ পরিবার থেকে বলেছিলাম, নিরপেক্ষ ব্যক্তির অধীনে জুডিশিয়ারি ইনকোয়ারি কমিশন গঠন করতে। এই কমিশন ইনভেস্টিগেইট করবে। এমনকি আগে আর্মি ও সিভিল যেই তদন্ত করেছে সেগুলোকে দেখবে। দেখে পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করবে। এটাই মূল চেষ্টা হওয়া উচিত ছিল।
‘আজকে যেটার রায়ে হয়েছে, এতে আপিল বিভাগে অনেক ফাঁসি বহাল থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। ফাঁসি বহাল রাখল এবং ফাঁসি দিয়ে দিল, তাহলে কী হবে? একটা বড় অংশকে যখন ফাঁসি দিয়ে দিচ্ছেন, তখন অনেক তথ্য ওখানেই চলে যাবে। এরপর পেছনে কারা ছিল তা শনাক্ত করা ডিফিকাল্ট হয়ে যাবে।’
সাকিব বলেন, ‘হাইকোর্টের রিকমেন্ডেশনে একটা পয়েন্ট ছিল যে, দে আর কনস্পেরিটরস। এর পেছনে যে কনস্পেরিটরস আছে, তা নিয়ে হাইকোর্টেরও ডাউট নাই। কিন্তু কে বা কারা সেই জিনিসটা আমরা এখনো জানি না। একেকটা রাজনৈতিক দল তাদের মতাদর্শ প্রকাশ করে।’
একই দাবির কথা জানিয়েছেন নিহত মেজর মমিনুল ইসলামের ভাই ডা. আল মামুন শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ‘১৩ বছরেও এই নারকীয় হত্যার বিচার শেষ হয়নি। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এই বিচারের শেষ দেখতে চাই। আমরা এই ১৩ বছরেও জানতে পারিনি, কারা এই হত্যার পেছনে ছিল। ষড়যন্ত্র করেছিল কারা? তাদের চিহ্নিত করে বিচার করার দাবি জানাচ্ছি।’
কারা হত্যার পেছনে ছিল, তা নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন মেজর মোস্তফা আসাদুজ্জামানের বড় বোন হোসনে আরা পারভীন।
তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু জানি না। কারা করেছে? আমরা জানতে চাই। আমরা যা হারিয়েছি, তা আর ফিরে পাব না। আমি ভাই হারিয়েছি, কেউ বাবা হারিয়েছে, কেউ সন্তান হারিয়েছে, কেউ স্বামী। আমরা যেন বলতে পারি, আমাদের প্রিয়জনকে হত্যার বিচার পেয়েছি। এতটুকুই চাওয়া।’
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। যথাযথ মর্যাদায় শুক্রবার পিলখানা হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ১৩তম শাহাদাতবার্ষিকী পালন হয়েছে।
এ উপলক্ষে বনানীতে সামরিক কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ওই সময় কর্মরত সামরিক সদস্যরা স্যালুট প্রদান করেন। পরে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সব স্তরের সেনাসদস্যদের উপস্থিতিতে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত হয়।