বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘সূর্যমুখীর গাছ ভাঙছে দর্শনার্থীরা’

  •    
  • ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১২:০৭

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মো. মতিউজ্জামান বলেন, ‘যেকোনো ফসল চাষে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরে সেটি আর চাষ করতে চায় না। এ জন্য বাগানে ঢোকার আগে সবারই উচিত কৃষকের বিষয়টি মাথায় রাখা।’

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে সূর্যমুখী ফুলের ব্যাপক চাষ হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এ ফুলের বাগান দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীদের ঢল নামছে রামগোপালপুর ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামে।

তাদের কেউ কেউ ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন, কেউ আবার বাগানের ভেতরে ঢুকে ছুঁয়ে দেখছেন সূর্যমুখী। এতে তাদের অসতর্কতায় পায়ের নিচে পড়ে মারা পড়েছে অনেক গাছ।

এ ঘটনায় ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে এলাকার কয়েকটি ক্ষেতে দেখা যায়, সূর্যমুখীর ফুলগুলো অনেক বড় হয়েছে। রোদের দিকে মুখে করে হলুদ ফুলগুলো হাসছে। তবে, বেশীরভাগ ফুলের পাপড়ি ঝরে বীজ এসেছে। এর মধ্যেই কিছুক্ষণ পর পর আসছে নানা বয়সী দর্শনার্থী।

বাগানে ঢুকেই ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন সবাই। দূর থেকে আসায় কৃষকরা তাদের বাধা দিচ্ছেন না। তবে, ক্ষেতে ঢুকে হৈ-হুল্লোড় করায় তাদের অসাবধানতায় অনেক গাছ ভেঙে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে, সেদিকে তাদের যেন কোনো হুশই নেই।

ফারুক হোসেন নামে এক দর্শনার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সূর্যমুখী ফুল খুবই আকর্ষণীয়। এ জন্য ছয়জন বন্ধু মিলে নান্দাইল থেকে এখানে ঘুরতে এসেছি। তবে ফুলগুলোতে অনেকে হাতাহাতি ও নাড়ানাড়ি করছে। ফলে দৃষ্টিনন্দন ফুলগুলো নেতিয়ে পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বাগানের ভেতরে যাইনি৷ তবে, কৃষক বাঁধা না দেওয়ায় অনেকে ভেতরে যাওয়ার সময় গাছের গোড়ায় পা দিচ্ছে। এতে অনেক গাছ মারা গেছে।’

দর্শনার্থীরা গাছের গোড়ায় পা দেয়ায় অনেক গাছই এরই মধ্যে মারা গেছে। ছবি: নিউজবাংলা

হাফিজুর রহমান ও সুমাইয়া আক্তার দম্পতি বলেন, ‘অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে কৃষক সূর্যমুখী চাষ করেছেন। কিছু যুবক আর অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা হৈ-হুল্লোড় করে বাগানে ঢুকে কতগুলো গাছ মেরে ফেলছে। সবার উচিত কৃষকের ক্ষতি না করা।’

হৈ-হুল্লোড় করে বাগানে প্রবেশ করা কিশোর সাকিব, রাহাত, সাব্বির নামে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা নিউজবাংলাকে জানান, আসলে ছবি তুলতেই মোটরসাইকেল নিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর শম্ভুগঞ্জ এলাকা থেকে এসেছেন তারা। বাগানের বাইরে থেকে ছবি ভালো না আসায় তারা ভেতরে প্রবেশ করেছেন।

তবে তারা গাছ মেরে ফেলছেন না জানিয়ে বলেন, আমরা আসার আগেই দেখেছি অনেক গাছ মারা গেছে।

এ দিকে দর্শনার্থীদের এমন আচরণে দুঃখপ্রকাশ করেছেন সূর্যমুখী বাগানের মালিক জাহাঙ্গীর হাসান রতন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক দূর থেকে কষ্ট করে দর্শনার্থীরা আসেন। বাগানে প্রবেশে বাধা দিলে তারা কষ্ট পাবেন, তাই কাউকে বাঁধা দেই না।

‘এ জন্য অনেকে ইচ্ছেমতো ফুলে হাতাহাতি, গাছ নাড়াচড়া ও না বুঝে গাছের গোড়ায় পা দেয়। এতে ফুল ও বীজের ক্ষতির পাশাপাশি বাগানের চারপাশের অনেক গাছ নষ্ট হয়েছে।’

তিনি জানান, গত বছর সূর্যমুখীর এক কেজি বীজ পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করেন। খরচ বাদে অর্ধেক লাভ হওয়ায় এবার ২০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছেন। দৃষ্টিনন্দন সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন অন্য কৃষকরাও।

যুবক ও কম বয়সী ছেলেমেয়েরাই বাগানে ঢুকে হৈ-হুল্লোর করছেন বলে জানা গেছে। ছবি: নিউজবাংলা

উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মুক্তাদির হাসান জানান, সূর্যমুখীর প্রতিটি গাছে ৫০০ থেকে ৬৫০টি বীজ হয়। এক একর জমিতে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়, আর বীজ উৎপাদন হয় এক টন। এক টন বীজ ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। সূর্যমুখীর গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

তিনি বলেন, ‘বাগান পরিদর্শন করেছি। কিছুদিন আগেও পর্যাপ্ত ফুলসহ তরতাজা গাছ থাকলেও এখন অনেক গাছ নেতিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে ফুলে বীজ উৎপাদন হবে। তাই কিছুদিন বাগানের ভেতর দর্শনার্থী যেতে না দিতে কৃষককে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মো. মতিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলায় ২১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গৌরীপুর উপজেলায় মাত্র ২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এ ছাড়া এটি চাষে লাভ বেশি হয়।’

তিনি বলেন, যেকোনো ফসল চাষে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরে সেটি আর চাষ করতে চায় না। এ জন্য বাগানে ঢোকার আগে সবারই উচিত কৃষকের বিষয়টি মাথায় রাখা।

‘আগামীতে সূর্যমুখীর চাষ বাড়াতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করে উৎপাদন বাড়ানো হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর