বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘শুধু পদোন্নতির আশায় গবেষণা রাবি শিক্ষকদের’

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১০:২৭

সম্প্রতি ইউজিসি প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গবেষণাব্যয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে থাকলেও সেই অনুপাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশনা সংখ্যায় পিছিয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বরাদ্দ বাড়লেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বাড়ছে না গবেষণা। নেই তেমন কোনো প্রকাশনাও। শুধু পদোন্নতির জন্য গবেষণা হওয়ায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকজন শিক্ষক।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গবেষণাব্যয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে থাকলেও সেই অনুপাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশনা সংখ্যায় পিছিয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মনজুর হোসেন বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা সংখ্যা কম হওয়ার তিনটি কারণ আছে বলে আমার মনে হয়। একটি হলো শিক্ষকরা গবেষণা করছেন, কিন্তু তাদের প্রকাশনাগুলো ঠিকমতো জমা দিচ্ছেন না।

‘দ্বিতীয়টি, যারা গবেষণা করছেন তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক কম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গবেষকদের সঠিকভাবে দেখাশোনা করে না। তৃতীয়ত, যে শিক্ষকরা গবেষণা করছেন তার অধিকাংশই পদোন্নতির জন্য গবেষণা করেন। পদোন্নতি হয়ে গেলে তিনি গবেষণা করা বাদ দেন। যার ফলে প্রকাশনার সংখ্যা কমে যাচ্ছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গবেষণার একটি বিশেষ অন্তরায় হলো অপ্রতুল গবেষণা ফান্ড। যদিও ইউজিসির তথ্য মতে গবেষণাব্যয় অনুযায়ী প্রকাশনা নেই। তারপরও এই ফান্ড যথেষ্ট নয়।

তিনি আরও বলেন, “এই সমস্যা দূর করতে হলে শিক্ষকদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কেন তারা গবেষণা করছেন না এবং যারা করছেন তারা কেন তাদের প্রকাশনা জমা দিচ্ছেন না। এ ছাড়া আমাদের দেশে অধ্যাপকদের কোনো ‘ক্যাটাগরি’ নেই। যেটা বহির্বিশ্বে হয়ে থাকে।

“যদি শিক্ষকদের ক্যাটাগরি পদ্ধতির মধ্যে নিয়ে আসা যায়, তাহলে তারা নিয়মিত গবেষণা করবেন এবং বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্ট নিয়ে আসবেন। তাহলে উন্নতমানের গবেষণা ও প্রকাশনা পাওয়া যাবে।”

এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গবেষণার একটি বিশেষ অন্তরায় হলো অপ্রতুল গবেষণা ফান্ড। যদিও ইউজিসির তথ্য মতে গবেষণাব্যয় অনুযায়ী প্রকাশনা নেই। তারপরও এই ফান্ড যথেষ্ট নয়।’

একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ‘শিক্ষকদের পদোন্নতি অবশ্যই পারফরমেন্স ইনডিকেটর (কেপিআই) অনুযায়ী হওয়া উচিত। তাহলে কোনো শিক্ষক গবেষণা বাদে পদোন্নতি পাবেন না।

‘তা ছাড়া যেসব শিক্ষক অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন তারাও গবেষণা বন্ধ করবেন না। এতে অধ্যাপকদের ক্যাটাগরি হবে। ফলে তাদের গবেষণার মান অনুযায়ী এ, বি এবং সি ক্যাটাগরিতে পড়বে এবং বেতনকাঠামোও সেভাবে বণ্টন করা হবে। তাহলে ভালো মানের গবেষণা ও প্রকাশনা পাওয়া যাবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ইয়ামিন ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনার সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষকরা গবেষণা করছেন তারা তাদের গবেষণাপত্র জমা দিতে আগ্রহী না।

‘আরেকটি কারণ পাবলিকেশনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাপ দেয়া হয় না। এতে যেমন প্রকাশনা সংখ্যা কমে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি তার গবেষণালব্ধ জ্ঞান থেকে দেশ-জাতি বঞ্চিত হচ্ছে। তাই প্রত্যেক শিক্ষকের উচিত তার প্রকাশনা বের করা। গবেষণা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, দেশ, জাতি সকলেই উপকৃত হবে।’

আমাদের কিছু শিক্ষক তাদের প্রয়োজনের গবেষণাটা করে গবেষণা বন্ধ করে দিচ্ছেন। তাই সবার কাছে আহ্বান, আমাদের প্রধান যে কাজ শিক্ষা দেয়া ও গবেষণা করা, আমরা যেন সেদিকে মনোযোগ দিই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা না করলে প্রকাশনা সংখ্যা কম হতে পারে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক বাইরে পিএইচডি করছেন। অর্থাৎ দেশের বাইরে যারা পাবলিকেশন করছেন তারা ওই ল্যাবের অ্যাড্রেস দিচ্ছেন। ফলে তাদের পাবলিকেশনগুলো আমাদের এখানে যুক্ত হচ্ছে না। এটি একটি কারণ।

‘আরেকটি কারণ হতে পারে, আমাদের শিক্ষকরা তাদের যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু করেই তাদের গবেষণা বন্ধ করে দিচ্ছেন। আমরা এই অবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর জন্য ইতোমধ্যে সব বিভাগের কাছে গবেষণা প্রকল্প আহ্বান করেছি। এই প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে জমা দিয়ে অর্থায়নের দাবি করব। আশা করছি তাহলে এই স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে পারব।’

গবেষণার সঙ্গে পদোন্নতির সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু শিক্ষক তাদের প্রয়োজনের গবেষণাটা করে গবেষণা বন্ধ করে দিচ্ছেন। তাই সবার কাছে আহ্বান, আমাদের প্রধান যে কাজ শিক্ষা দেয়া ও গবেষণা করা, আমরা যেন সেদিকে মনোযোগ দিই।

‘তা ছাড়া বর্তমানে দেশের যে অবস্থা, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সবাইকে যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে, পূর্ণভাবে পালন করতে হবে। তাহলে এই অবস্থার উত্তরণ হবে বলে আশা করছি।’

চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি ইউজিসি তাদের ৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাব্যয় ৬৬১ লাখ টাকা এবং প্রকাশনার সংখ্যা ৪৪৫টি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাব্যয় ৩০০ লাখ এবং প্রকাশনা ৫৮৫টি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাব্যয় ৩০৪ লাখ টাকা এবং ৩৫১টি প্রকাশনা। অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয়ে গবেষণাব্যয় ৪৪০ লাখ টাকা, যার বিপরীতে প্রকাশনা সংখ্যা ১৮৩টি। যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুপাতে কম।

এ বিভাগের আরো খবর