বহুল প্রতীক্ষিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র আবাসিক হল ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হল’-এ সিট বরাদ্দ পেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। ১৬ তলা হলটির ১৫৬টি কক্ষে চারজন করে ৬২৪ ছাত্রী থাকার কথা থাকলেও ১৫০টি কক্ষে ৮ জন করে মোট ১ হাজার ২০০ ছাত্রীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
হলে বরাদ্দকৃত ছাত্রীদের তালিকা, কক্ষ নম্বরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম বলেন, ‘সব প্রক্রিয়া শেষে হলে ছাত্রী তোলার জন্য তালিকা প্রকাশ করেছি। যদিও একা কাজ করাটা আমার জন্য কষ্টসাধ্য ছিল, তবুও সিট বরাদ্দ দিতে পেরে আমি আনন্দিত।’
শামীমা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিটি কক্ষে চারজন করে থাকার কথা থাকলেও উপাচার্যের নির্দেশে ৮ জন রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী রুম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
প্রতিটি বেডে দুজন থাকবেন। উপাচার্য বলেছেন এই খাটে দুজন করে থাকা যাবে। পড়ার টেবিল চারটাই থাকবে। সবাই তো আর একসঙ্গে পড়াশোনা করে না। তাছাড়া হলের লাইব্রেরি সারা রাত খোলা থাকবে। আর এমন পড়ার টেবিল লাইব্রেরিতে অনেক পড়ে আছে।’
শামীমা বেগম বলেন, ‘আনুষঙ্গিক কাজ প্রায় সবই শেষ। বাংলাবাজারের অংশে আরেকটি বড় গেট করা হবে। আপাতত এই রোডের দুই পাশে দুটি স্পিড ব্রেকার দেয়া হবে। তাছাড়া এখানে একটি ফুটওভার ব্রিজ করারও প্রক্রিয়া চলছে।
‘সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে হলে ছাত্রীরা উঠবেন। এর মধ্যে সব কার্যক্রম শেষ করা হবে।’
হলে সিটপ্রাপ্ত ছাত্রীদের আগামী ২ মার্চ থেকে ১০ মার্চের মধ্যে অফিস চলাকালীন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের হাউস টিউটরের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে
১. শিক্ষার্থীদের পোর্টালে লগইন করে আবেদন ফরমের ডাউনলোডকৃত কপি।
২. নগদ, রকেট অথবা শিওরক্যাশের মাধ্যমে ৫২৬৫ টাকা পরিশোধের রসিদ।
৩. হলে বসবাসের শর্তাবলি ডাউনলোড করে অভিভাবক ও ছাত্রীর স্বাক্ষরিত কপি।
৪. অঙ্গীকারনামা ডাউনলোড করে অভিভাবক ও ছাত্রীর স্বাক্ষরিত কপি এবং সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
যা রয়েছে হলে
বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রীদের জন্য একটি পাঠাগার, একটি ক্যানটিন, একটি ডাইনিং রয়েছে। এ ছাড়া প্রতি তলায় সাতটি করে শৌচাগার, নয়টি গোসলখানা রয়েছে। ভবনটিতে চারটি লিফটের ব্যবস্থা রয়েছে। হলের তৃতীয় থেকে ১৬ তলা পর্যন্ত ছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আর নিচতলা ও দোতলায় রয়েছে লাইব্রেরি, ক্যানটিন ও ডাইনিং।
২০২০ সালের ২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এ হলের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের প্রায় এক বছর পর আসনের জন্য ছাত্রীদের থেকে আবেদন নেয় হল কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনের ১৬ মাস পর হলে ছাত্রীদের সিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ছাত্রী হল নির্মাণের প্রেক্ষাপট
২০০৯ ও ২০১১ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ছাত্রী হল নির্মাণের ঘোষণা আসে। ২০১১ সালেই শুরু হয় হল প্রকল্পের কাজ। পরে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি লিয়াকত অ্যাভিনিউয়ের ২৩ কাঠা জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা ওই সময় ছাত্রী হলের ব্যানার টানিয়ে জায়গাটির দখল নেন।
২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট জায়গাটিতে ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ ছাত্রী হল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। ওই দিন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বৈঠকে এক হাজার ছাত্রীর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে ২০ তলা ফাউন্ডেশনের দুটি টাওয়ার নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর এ হলটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এর এক বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে হলটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়।
হল নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম দফায় মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত। দ্বিতীয় মেয়াদ ২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন। তৃতীয় দফা ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।
২০১৯ সালেও কাজ শেষ না হলে ২০২০ সালেও অতিরিক্ত সময়ে কাজ চলতে থাকে। শুরুতে এই হলের নির্মাণব্যয় ৩৩ কোটি টাকা ধরা হলেও কাজ শেষ করতে ৩৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান হলটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাৎ হোসেন।