মার্চের শুরুতে কলকাতা যেতে ফ্লাইট টিকিট কাটতে যান বাংলাদেশ ডকুমেন্টারি ফিল্ম মেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদ করিম। গিয়ে জানতে পারেন ওই সময়ের যাওয়া-আসার (রিটার্ন) টিকিট কাটতে তার লাগবে ৩৪ হাজার টাকা।
ঢাকা থেকে মাত্র ৪৫ মিনিটের দূরত্বের এই শহরে যেতে এত টাকা কেন গুনতে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটা তো এখন আমজনতার সমস্যা। বিমানের ভাড়া আরও বেশি। স্পাইস জেটে তারও বেশি। লম্বা সময় বসে থাকার পর এখন লুণ্ঠন শুরু হয়েছে।’
এয়ারলাইনসগুলো বলছে, নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট না ফেরায় টিকিটের জন্য অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী যাত্রীদের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি টিকিটের জন্য দিতে হচ্ছে ৩৩-৩৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।
২০২০ সালে সারা বিশ্বে করোনার প্রকোপ শুরু হলে অন্যান্য অনেক দেশের মতোই নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করে দেয় ভারত। কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর গত বছরের অক্টোবর থেকে বিদেশি পর্যটকদের জন্য পুনরায় পর্যটন ভিসা চালু করে দেশটি।
শুরুর দিকে ভাড়া করা বা ব্যক্তিগত বিমানে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হলেও পরে অন্যান্য মাধ্যমেও যাওয়া-আসা করা যাচ্ছিল।
গত বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে ওই বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে আন্তর্জাতিক অনেক গন্তব্যের মতো ঢাকা থেকে ভারতের তিনটি গন্তব্য দিল্লি, চেন্নাই ও কলকাতাতেও ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করা হয়। চার মাস বন্ধ থাকার পর ওই বছরেরই ৫ সেপ্টেম্বর থেকে এয়ার বাবল চুক্তির আওতায় ফ্লাইট শুরু করে দুই দেশ।
শুরুতে দুই দেশের বিমান সংস্থাগুলো সপ্তাহে ১৪টি করে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে এ সংখ্যা ৪২ করা হয়। এর মধ্যে ২১টি বরাদ্দ করা হয়েছে দেশি এয়ারলাইনসগুলোর জন্য। বাকি ২১টি ভারতীয় এয়ারলাইনসের জন্য।
এর মধ্যে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং টিকা কার্যক্রম জোরদার হওয়ায় টিকা নেয়া বাংলাদেশিদের জন্য ভারতে প্রবেশের আগে বা পরে পিসিআর টেস্টের বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর থেকে ভারতে বাংলাদেশিদের যাওয়া-আসাও আগের চেয়ে বেড়েছে।
যাত্রীদের চাহিদা বাড়লেও ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে দুই দেশের কর্তৃপক্ষ নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। উড়োজাহাজে যাত্রীসংখ্যাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ফলে পূর্ণ সক্ষমতায় যাত্রী পরিবহন করতে পারছে না এয়ারলাইনসগুলো। এতে টিকিটের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
রুটটিতে ফ্লাইট পরিচালনা করা বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস-বাংলার জনসংযোগ ও বিপণন বিভাগের মহাপরিচালক কামরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফ্লাই বাবলের কারণে ফ্লাইটসংখ্যা যেমন কম, তেমনি উড়োজাহাজে আসনসংখ্যাও সীমিত করা হয়েছে। কিন্তু যাত্রীদের চাহিদা কমেনি। তবে কেউ যদি একটু আগে থেকে ভ্রমণ পরিকল্পনা করেন, তিনি মোটামুটি কম দামে টিকিট কিনতে পারবেন।
‘কিন্তু যদি জরুরি প্রয়োজনে কম সময়ের মধ্যে যেতে হয় তাহলে টিকিটের দাম বেশি হবে। স্বাভাবিক সময়ের মতো বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু হলে এ সমস্যা আর থাকবে না।’
টিকিটের দাম বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে জেট ফুয়েলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবকেও দায়ী করেন তিনি।