কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে উন্নয়নকাজ চলার কারণে বিশাল সড়কের পুরোটায় দখল করে নিয়েছে বাস। দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে শত শত গাড়ি। এই সড়কে হেঁটে চলাচলেরও উপায় নেই। এ যেন সড়ক নয়, পুরোটাই বাস টার্মিনাল।
সিলেট নগরের কদমতলী থেকে কিনব্রিজ পর্যন্ত সড়কের এই দশা। এলোপাতাড়ি গাড়ি রাখার কারণে এ সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। তিন বছর ধরে চলছে এমন অবস্থা।
সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের অবস্থান কদমতলী এলাকায়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই টার্মিনালের আধুনিকায়ন চলছে। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া আধুনিকায়ন কাজ ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০২২ সালে এসেও শেষ হচ্ছে না কাজ।
ওই সড়কের পাশেই সিলেট রেলওয়ে স্টেশন। রেলস্টেশনের সামনেও দাঁড়িয়ে থাকা বাসের সারি। এতে স্টেশনে যাত্রীদের যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন দূরপাল্লার প্রায় ৫০০ বাস ছেড়ে যায়। এরচেয়ে দ্বিগুণসংখ্যক বাস চলাচল করে আন্তজেলা রুটে। টার্মিনালে আধুনিকায়নের কাজ চলায় এই বাসগুলো দাঁড় করিয়ে রাখা হয় সড়কের ওপর।
সিলেট নগরের কদমতলী থেকে কিনব্রিজ পর্যন্ত সড়কে দাঁড়িয়ে থাকে সারি সারি বাস। ছবি: নিউজবাংলা
সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, হবিগঞ্জ যাওয়ার জন্য বাস টার্মিনাল এলাকায় আসেন নগরের শিবগঞ্জ এলাকার শরিফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘টার্মিনাল এলাকার সড়কজুড়ে বাস দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে অসহনীয় যানজট লেগে থাকে। আমি জরুরি কাজে হবিগঞ্জ যাচ্ছিলাম। ২ ঘণ্টায়ও টার্মিনাল এলাকা থেকেই বের হতে পারিনি।’
ঢাকাগামী হানিফ বাসের চালক অরুণ দেব বলেন, ‘টার্মিনাল থেকে বাস বের করতেই ১ ঘণ্টার বেশি লেগে যায়। আমরা যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি না। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে প্রায়ই ঝামেলা বাধে।’
সূত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সিলেট সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের শুরুতে। সাড়ে সাত একর জমিতে এই টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১১৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় যথাসময়ে শেষ হয়নি কাজ।
সিটি করপোরেশন সূত্র আরও জানায়, আগের বাস টার্মিনালে যাত্রীদের জন্য বসা এবং টয়লেটের ব্যবস্থা ছিল না। পুরো টার্মিনালে যততত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হতো। এ অবস্থায় টার্মিনালটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন।
সূত্র জানায়, টার্মিনাল আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ায় ডাম্পিং গ্রাউন্ড নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য ৫৬ কোটি টাকা এবং টার্মিনালের অবকাঠামো উন্নয়নে ৬১ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। পুরো টার্মিনালের আবর্জনা যাবে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। সেখানে পরিশোধন করা হবে।
এ ছাড়া বাস টার্মিনালে আধুনিক ভবন হচ্ছে। সেখানে যাত্রীদের জন্য বিশ্রাম কক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কক্ষ, টয়লেট, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকবে।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, টার্মিনালে প্রত্যেক রুটের জন্য আলাদা পার্কিং জোন এবং প্রবেশ ও বের হওয়ার আলাদা রাস্তা থাকবে। থাকবে মেডিক্যাল সেন্টার।সরেজমিন দেখা যায়, টার্মিনালের নির্মাণকাজের কারণে ভেতরে গাড়ি রাখার সুযোগ নেই। সব গাড়ি টার্মিনালের বাইরে সড়কেই পার্কিং করা। কিনব্রিজ পার হয়ে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বর পর্যন্ত পুরো সড়কেই সারি সারি বাস রাখা। কেবল সড়ক নয়, আশপাশের বিপণিবিতানের সামনে এবং রেলস্টেশনের খোলা অংশে রাখা হয়েছে শত শত বাস।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। প্রতিদিন স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ হাজারও মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয় ।
এই টার্মিনাল থেকে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলের যানবাহন ছেড়ে যায়। এ ছাড়া সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার কোচ, মিনিবাস চলাচল করে এখান থেকে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিলেটের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ জানান, করোনার কারণে দীর্ঘদিন টার্মিনালের কাজ বন্ধ ছিল। এ কারণে যথাসময়ে কাজ শেষ হয়নি। টার্মিনালের আধুনিকায়ন চলায় সড়কেই গাড়ি রাখতে হয়।
তিনি বলেন,‘যথাসময়ে কাজ না হওয়ায় আমাদের অনেককে লোকসান গুনতে হচ্ছে। দীর্ঘ যানজটের কারণে যথাসময়ে বাস ছেড়ে যেতে ও প্রবেশ করতে পারে না। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়।’
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরশেনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ‘২০২১ সালের জুনের মধ্যে টার্মিনালের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে যথাসময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। এখন পুরোদমে কাজ চলছে। এই জুনের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে।’
তিনি বলেন, ‘আধুনিকায়ন কাজ শেষ হলে এটি হবে দেশের অন্যতম আধুনিক বাস টার্মিনাল। এখানে আধুনিক ভবনে যাত্রীদের জন্য বিশ্রাম কক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কক্ষ, টয়লেট, বিশুদ্ধ পানি প্রভৃতির ব্যবস্থা থাকছে।’