বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনা টেস্ট: প্রতারিত হয়ে নিজেই প্রতারক

  •    
  • ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৫:৫৬

করোনা টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে বেলাল যেভাবে প্রতারিত হয়েছেন একইভাবে করোনা টেস্টের ফল পরিবর্তন করে দেয়ার কথা বলে প্রতারণার জন্য ছক তৈরি করেন তিনি।

বেলাল হোসেন ফেরি করে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতেন। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের এক দেশে কাজের সুযোগ পান। সব প্রক্রিয়া শেষ করে সরকারি নিয়ম মেনে গত বছরের মার্চে কুমিল্লার একটি হাসপাতালে করোনা টেস্টের নমুনা দেন। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি হাসপাতালের ডাক্তার পরিচয় দিয়ে জানান বেলালের করোনা টেস্টের ফল পজিটিভ এসেছে। কিন্তু তার করোনার ফল পরিবর্তন করা সম্ভব। আর এ জন্য দিতে হবে ১০ হাজার টাকা।

কিন্তু টাকা দেয়ার পরেও মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে করোনার ফল পজিটিভ আসে। টাকা দিয়ে বিদেশে না যেতে পেরে হাসপাতালে যোগাযোগ করেন বেলাল। হাসপাতাল থেকে তাকে জানানো হয়, ডাক্তার পরিচয় দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা ব্যক্তির নামে কেউ হাসপাতালে কাজ করে না। বেলাল বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। একই বছরের এপ্রিলে করোনা টেস্ট নেগেটিভ আসার পর মধ্যপ্রাচ্যে যান তিনি।

যেভাবে বেলাল প্রতারিত হয়েছেন একইভাবে করোনা টেস্টের ফল পরিবর্তন করে দেয়ার কথা বলে প্রতারণার জন্য ছক তৈরি করেন তিনি। সেই অনুযায়ী বিদেশে যাওয়ার আগে বেলালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সবুজকে নিয়ে একটি চক্র গড়ে তোলেন। বন্ধু সবুজের সঙ্গে হাতিয়ে নেয়া টাকা ভাগাভাগির চুক্তি করে বেলাল প্রবাসে চলে যান।

প্রায় এক বছর ধরে চলে প্রতারণা। এই চক্রটির প্রধান বেলাল।

বেলাল ও তার সহযোগী সবুজসহ ১৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১। র‌্যাব বলছে, এই চক্রটির কোনো হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। তারপরেও শুধু করোনা টেস্ট দিতে আসা মানুষের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে করোনার ফল পরিবর্তন করার আশ্বাস দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত। এভাবে চক্রটি কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতারক চক্রের বিষয়ে জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা টেস্ট নেগেটিভ ফল বদলে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। চক্রের ১৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাব-১১ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- জসিম উদ্দিন, সুলতান মিয়া, বেলাল হোসেন, আবুল হোসেন, আবদুল নুর, আলফাজ মিয়া, মো. শামিম, আহাম্মদ হোসেন, ইমরান উদ্দিন মিলন, সবুজ মিয়া, আব্দুর রশিদ, আব্দুল করিম চৌধুরী, আঙ্গুর মিয়া ও আলমগীর হোসেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে আয় করা সাত লাখ টাকা, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১২০টি সিম কার্ড, ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন, ট্যাব, ৩২টি মোবাইল, একটি পাসপোর্ট, নোটবুক ও চক্রের সদস্যদের বেতনের হিসাব জব্দ করা হয়।

যেভাবে প্রতারণাগ্রেপ্তার প্রতারক চক্রের সদস্যদের বরাতে আল মঈন বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা করোনা টেস্টের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলার নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে বিদেশগামী যাত্রী ছদ্মবেশে অবস্থান নিয়ে সাধারণ যাত্রীদের মোবাইল নম্বরগুলো সংগ্রহ করতেন।

নম্বরগুলো সংগ্রহ করে বেলাল ও সবুজকে পাঠাতেন তারা। বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের প্রকৃত করোনা টেস্টের ফলাফল হাতে পাওয়ার আগেই বেলাল ও সবুজ সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের করোনা টেস্ট বিভাগের ডাক্তার অথবা হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ পরিচয়ে করোনা টেস্টের ফল পজিটিভ এসেছে বলে জানাতেন। পরে পজিটিভ থেকে নেগেটিভ করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিতেন।

ভুক্তভোগীরা বেলাল ও সবুজের কথা অনুযায়ী এই সব নম্বর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠালে অন্য সদস্যরা তা সংগ্রহ করতেন। টাকা সংগ্রহের অবস্থান সব সময় ভিন্ন ভিন্ন জেলায় নির্ধারণ করা হতো। একটি সিম একদিন ব্যবহার করে তা কিছুদিন বন্ধ রেখে ফের ব্যবহার করতেন। প্রতারণার পুরো কাজটি করতে যে সিমগুলো ব্যবহার করা হত সেগুলো সরবরাহ করতেন ইমরান উদ্দিন মিলন। ১২০ টাকায় কেনা সিম চক্রের কাছে আটশ’ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি করতেন।

মিলন যেভাবে সিম সংগ্রহ করতেনর‍্যাব জানায়, চক্রের কাছে শতাধিক সিম সরবরাহ করে আসছিলেন মিলন। তিনি ফুটপাতে সিম বিক্রির আড়ালে সাধারণ মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যবহার করে কৌশলে শত শত মোবাইল সিম তুলে নিতেন। ১২০ টাকায় কেনা প্রতিটি সিম মিলন চক্রের কাছে এক হাজার টাকা করে বিক্রি করতেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, প্রতারণার মাধ্যমে চক্রটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেছে। চক্রটি এক বছরে হাজারের বেশি বিদেশ যাত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সবুজ এই টাকা দিয়ে গ্রামের বাড়িতে বাড়ি তৈরি করেছেন।

র‌্যাব জানায়, বেলাল প্রতারণার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে যাতায়াত করেছেন। বেলালও ছয় শতাধিক বিদেশগামী যাত্রীদের সঙ্গে একই কায়দায় প্রতারণা করেছেন। এভাবে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য জানিয়েছেন তিনি। চক্রের অন্য সদস্যদের প্রতিদিন হাজিরা ভিত্তিতে আটশ’ থেকে এক হাজার টাকা করে দেয়া হতো।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আল মঈন বলেন, এই চক্রের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। চক্রের সদস্যদের বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে আলাদা আলাদা সেক্টরে কাজ করতে বলা হতো।

এ বিভাগের আরো খবর