বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাটটি কেবল খেজুরের গুড় কেনাবেচার

  •    
  • ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৫:০৬

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের সরোজগঞ্জে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে স্থানীয় সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এ হাট বসে। হাট জমে সপ্তাহের সোম ও শুক্রবার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। প্রতি হাটে গুড় বিক্রি হয় প্রায় ২ কোটি টাকার।

বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সারি সারি সাজানো গুড়ের ভাঁড়। হাটে ঢুকতেই মন ভরে উঠবে খেজুরের গুড় ও নলেন পাটালির মিষ্টি গন্ধে। প্রতি বছরের মতো এবারও জমে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের খেজুরের গুড়ের হাট। গুড় কিনতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন ব্যাপারীরা। চলছে ক্রেতা-বিক্রেতা ও শ্রমিকদের কর্মযজ্ঞ।

শুধু খেজুরের গুড় বেচাকেনার জন্য এই হাটের ঐতিহ্য কয়েক শ বছরের। জেলার সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের সরোজগঞ্জে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে স্থানীয় সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এ হাট বসে। হাট জমে সপ্তাহের সোম ও শুক্রবার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। হাটের দুই পাশে চট পেতে ছোট ছোট ধামা-কাঠায় বাড়িতে তৈরি নলেন পাটালি বিক্রি করেন কৃষকেরা।

প্রতি বছর শীত মৌসুমে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেজুরের গুড় বেচাবিক্রি হয় এ হাটে। মৌসুমের প্রায় পুরো সময়ই হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে জমজমাট থাকে এই হাট। প্রতি হাটে প্রায় দুই কোটি টাকার গুড় কেনাবেচা হয় এখানে।

হাটে দাঁড়িয়ে গুড় দেখেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। একটি কাঠি ভাঁড়ের ভিতর ডুবিয়ে যাচাই করা হয় গুড়ের মান। দরদাম ঠিক হলে দাড়িপাল্লায় ওজন করে গুড়ের ভাঁড় ভর্তি করা হয় ট্রাকে। কেউ কেউ নিজ বাড়ি বা স্বজনদের বাড়ি পাঠানোর জন্য কেনেন গুড়, পাটালি। কেউ আবার পাঠান বিদেশেও।

দরদাম

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাটির হাঁড়ি বা ভাঁড়ের আকার ও ওজনভেদে ওঠানামা করে দাম। এক ভাঁড় গুড় বিক্রি হয় ৯০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এখানকার খেজুর গুড়ের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। তাই বেড়েছে দামও।

১০ বছর ধরে সদর উপজেলার কালুপোল গ্রাম থেকে সরোজগঞ্জের হাটে গুড় বিক্রি করতে আসেন গাছি ইব্রাহিম শেখ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আগের তুলনায় মাটির ভাঁড়ের দাম বেড়েছে। তাই গুড়ের দামও কিছুটা বেড়েছে।’

তিনি জানান, ১০ কেজি ওজনের প্রতিটি ভাঁড় ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় এবং ১৫ থেকে ১৬ কেজি ওজনের ভাঁড় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি নলেন পাটালি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকায়।

সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে গুড় কিনতে আসা ব্যবসায়ী ঈসা রুহুল বলেন, ‘৪০ বছর থেকে সরোজগঞ্জের হাটে গুড় কিনতে আসি। গাছিদের কাছ থেকে সরাসরি গুড় কিনে ট্রাক ভর্তি করি। আমি এই গুড় দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকি। এখানকার গুড় নির্ভেজাল হওয়ায় চাহিদাও অনেক বেশি। তাই দামও বেড়েছে আগের তুলনায়।’

বেচাবিক্রি

সরোজগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি এম আবদুল্লাহ শেখ বলেন, ‘সরোজগঞ্জ হাট খেজুর গুড়ের প্রধান মোকাম। এ হাটে গুড় কিনতে আসেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বরিশালসহ দেশের বড় বড় মোকামের ব্যাপারীরা।

‘প্রতি হাটের দিন গড়ে ২৫০ টন খেজুর গুড় বিক্রি হয়। যার বিক্রয়মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা।’ বলেন তিনি।

এ হাটে বিক্রি হওয়া গুড় এলাকার কৃষকেরা নিজ বাড়িতে যত্নের সঙ্গে তৈরি করেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এতে চিনি বা কোনো রাসায়নিক পদার্থ নেই। কিছুটা খয়েরি রঙের হলেও এসব গুড় পুরোটাই খাঁটি।’

কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহম্মেদ হাসানুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েক শত বছরের বেশি সময় ধরে গুড়-পাটালি বিক্রি হয় ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জের হাটে। প্রতি হাটে ২০ থেকে ২৫ ট্রাক গুড় চলে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ হাটের সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কাজ করে স্থানীয় প্রশাসন। তাই বেচাবিক্রি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।’

উৎপাদন

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এ জেলায় আড়াই লাখের মতো খেজুরগাছ রয়েছে। যার প্রায় অর্ধেকই সদর উপজেলায়। প্রতি মৌসুমে ২ হাজার ৫০০ টন গুড় উৎপাদিত হয় এ জেলায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, মৌসুমে প্রতিটি খেজুরগাছ থেকে অন্তত ১০ থেকে ১২ কেজি গুড় পাওয়া যায়। সে হিসাবে প্রতি বছর ২ হাজার ৫০০ টন গুড় উৎপাদিত হয়।

তিনি বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিরাপদ খেজুরের গুড় উৎপাদনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। খেজুরের রস সংগ্রহের সময় ভাঁড়ের মুখ তারজালি দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, যেন বাদুড় ভাঁড়ে মুখ দিয়ে ভাইরাস ছড়াতে না পারে। এটি বারবার ব্যবহার করা যায়। এভাবেই নিরাপদে রস সংগ্রহ করেন কৃষকরা। যা দিয়ে উৎপাদিত হয় নিরাপদ গুড়।’

এ বিভাগের আরো খবর