পণ্যের দাম বাড়ার যে ঊর্ধ্বগতি, তার নেপথ্যে অন্যতম কারণ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট। ব্যবসার বিভিন্ন পর্যায়ে অতিরিক্ত ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে, যার ফলে ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে দ্রব্যমূল্য।
রাজধানীর মিরপুরে ক্যাপিটাল টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্সে দোকান ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতারা বৃহস্পতিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিস্তারিত তুলে ধরেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান টিপু। এ সময় সংগঠনের সভাপতি নাজমুল হাসান মাহমুদ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
আরিফুর রহমান টিপু বলেন, ‘ভ্যাট কর্মকর্তারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চাপ দিয়ে ভ্যাট নিবন্ধন করাচ্ছেন। প্রতি মাসে রিটার্ন দাখিল না করলে নেয়া হচ্ছে জরিমানা।
‘উৎসবের মৌসুমে ১০ ভাগও ব্যবসা হয়নি। পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা ব্যবসায়ীরা কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন।’
আরিফুর রহমান টিপু বলেন, ‘দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রধান পাঁচটি খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাইকারি খুচরা ব্যবসা। ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপিতে এ খাতের অবদান ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ।’
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মোট ব্যবসার ৯০ শতাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের ব্যবসা। বিশ্বব্যাংক অনুমান করছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন চাকরির প্রয়োজন পড়বে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ তৈরির মাধ্যমে এ সংকট মোকাবিলা করা যেতে পারে।
দোকান ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘করোনায় গত বছর দুই ঈদ ও পহেলা বৈশাখে সাধারণ সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ ব্যবসা হয়নি। অন্যদিকে ঋণের বোঝায় দিশেহারা অনেক দোকান ব্যবসায়ী। মূলত ১৫ জনের কম কর্মীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র ব্যবসার আওতায় পড়ে। অন্যদিকে হকার, বাদামওয়ালা, ফেরিওয়ালা, পান-সিগারেট বিক্রেতাসহ স্বল্প পুঁজির ব্যবসাগুলো অতিক্ষুদ্র ব্যবসার আওতায় পড়ে।
‘দেশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় ৫৫ লাখ এবং এর সঙ্গে জড়িত কর্মচারী প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ। ১ থেকে ১০ লাখ টাকার সামান্য পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করা এসব ক্ষুদ্র দোকান ব্যবসায়ী করোনার মন্দা বাজারে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। করোনায় সারা দেশে ১০ থেকে ১৫ লাখ ক্ষুদ্র দোকান ব্যবসায়ীরা তাদের পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। শুধু রাজধানীতেই ব্যবসা হারিয়েছেন প্রায় ১ লাখ ক্ষুদ্র দোকান ব্যবসায়ী। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে না পেরে পরিবার নিয়ে অনেকে গ্রামে চলে গেছেন।’
এ অবস্থায় ভ্যাট আদায়ে হয়রানি বন্ধ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে যৌক্তিক ভ্যাট নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
দোকান ব্যবসায়ী সমিতির দাবি
২০১১-২০ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক ৫০ লাখ টাকা টার্নওভার সীমা পর্যন্ত ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চান তারা।
মৌলভীবাজার, নবাবপুর, চকবাজার ও বিভিন্ন জেলা-উপজেলার একজন পাইকারি বিক্রেতার ভ্যাট আদায়ের সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এবং নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত টার্নওভার মূল্যের ওপর পাইকারি পর্যায়ে দশমিক ৪ শতাংশ ও খুচরা ১ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট আদায়ের প্রস্তাব দেন তারা।
কাস্টমস ভ্যাট কর্মকর্তা কর্তৃক হয়রানি বন্ধ করা, নিজ নিজ এলাকার দোকান ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ কমিটি গঠন করে কাজ পরিচালনার প্রস্তাব করেন দোকান ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।
খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে বার্ষিক ৫০ লাখ টাকা টার্নওভার সীমা পর্যন্ত দোকান ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানগুলোক বাদ দিয়ে ভ্যাট আদায়ে সক্ষম শতভাগ দোকান ও প্রতিষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক ইএফডি মেশিন স্থাপন করে ভোক্তার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করতে হবে।
ইএফডি মেশিন শতভাগ না দেয়া পর্যন্ত উৎসে তথা আমদানি ও প্রস্তুতকারী সংস্থার নিকট হইতে ৬ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা যাবে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন সরকার। প্রজ্ঞাপনে ক্ষুদ্র-মাঝারি দোকান ব্যবসায়ীর কথা উল্লেখ না থাকায় তারা প্রণোদনার সুবিধা পাচ্ছেন না। তাই দোকান ব্যবসায়ীদের প্রণোদনার একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা দরকার।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে দুই কোটি টাকার বেশি মন্দ ঋণ পুনঃতফসিলে প্রস্তাব করেন তারা।
ভোক্তা অধিকার, মোবাইল কোট বাজার মনিটরিং কমিটিতে দোকান ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও করেন তারা।