বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাড়ি পাচ্ছেন সেই ৩ বোন

  •    
  • ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২২:৩৩

রুবি আক্তার জানান, ২০০৩ সালে তাদের বাবা মারা যান। তখন রুবির বয়স ছিল ৭। ২০১৯ সালে এলাকায় ফিরে দেখেন পৈতৃক জমি দখল করে নিয়েছেন প্রভাবশালী প্রতিবেশী। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গেলেও সমাধান মেলেনি। তারা বামনা থানার ওসিকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু ওসি পাত্তা না দেয়ায় বাধ্য হয়ে অনশনে বসেন তারা।

বাবার ভিটা ফেরত পেতে অনশনে বসা তিন বোনের জন্য বাড়ি করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক। আপাতত তা হবে সরকারি জমি বরাদ্দের মাধ্যমে। পরে তাদের বাবার ভিটা ফেরতের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বুধবার বিকেলে বামনা উপজেলার গোলাঘাটা গ্রামে যান এসপি জাহাঙ্গীর মল্লিক। তিন বোনের দাবি করা বসতভিটা ও জমি সম্পর্কে তিনি স্থানীয়দের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করেন। পরে বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ শেষে সরকারি জমিতে তিন বোনের জন্য বাড়ি করে দেয়ার ঘোষণা দেন।

এর আগে দুপুরে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কাফনের কাপড় পরে অনশনে বসা তিন বোনকে খাবার খাইয়ে অনশন ভাঙান এসপি।

এসপি জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, ‘বাবা-হারা তিনটি বোনের অসহায়ত্ব দেখে মনে হয়েছে, তাদের মানবিক সহায়তা জরুরি। আমি সব জেনেশুনে আপাতত ওদের মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দেয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। এতে যা খরচ হবে তা আমি ব্যক্তিগতভাবে বহন করবে। এ ছাড়া তাদের জমিসংক্রান্ত জটিলতার দ্রুত সমাধান করে দিতে ব্যবস্থা নেব। তাদের দাবি করা জমির কাগজপত্র সঠিক হলে তা দখলমুক্ত করা হবে।’

প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ সুপার আপাতত খাসজমিতে তিন বোনের ঘর তুলে দিতে জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিবেক সরকার, উপজেলা চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু ও ওসি বশির উদ্দীনের সঙ্গে কথা বলেছেন।

তিন বোনের জন্য আপাতত সরকারি জমি বরাদ্দের অনুরোধ করলে বামনার ইউএনও সম্মতি দেন। এর পরই এসপি বসতঘর নির্মাণের ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেন।

বড় বোন রুবি আক্তার বলেন, ‘চাইরডা বচ্ছর মানসের বাড়তে থাকছি, আর মোর বাপের জমিডা ফিররা পাইতে এর ওর দ্বারে ঘুরছি। কেউ মোগো জমিডু আইননা দেতে পারেনায়। এসপি স্যার মোগো জাগার ব্যবস্থা কইররা ঘর উডাইন্না সব খরচ দেয়ার আশ্বাস দেছেন। এহন মোনে অয় এট্টু কুল পাইতেছি, একজন অভিভাবক পাইছি। আল্লায় ওনারে ভালো করুক দোয়া হরি।’

দখল হওয়া পৈতৃক সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বুধবার বেলা ১১টার দিকে কাফনের কাপড় পরে অনশনে বসেন রুবি আক্তার, জেসমিন আক্তার ও মোসা. রোজিনা নামের তিন বোন। তারা বামনা উপজেলার গোলাঘাটা গ্রামের মৃত আবদুর রশীদের মেয়ে।

রুবি আক্তার জানান, ২০০৩ সালে তাদের বাবা মারা যান। তখন রুবির বয়স ছিল ৭। অন্য দুই বোন ও এক ভাই একেবারে শিশু। পরের বছর এক খালার হাত ধরে সপরিবারে তারা চট্টগ্রাম চলে যান। ২০১৩ সালে তিনি পোশাক কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনিই পরিবারের হাল ধরেন।

২০১৪ সালের শেষ দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের ভাই মারা যান। তিন বছর পর অসুস্থ হয়ে মারা যান তাদের মা খাদিজা বেগম। বর্তমানে তার বোন জেসমিন এসএসসি পরীক্ষার্থী ও রোজিনা দশম শ্রেণিতে পড়ে।

পৈতৃক জমির বিষয়ে রুবি বলেন, ‘২০১৯ সালে এলাকায় ফিরে দেখি পৈতৃক জমি দখল করে নিয়েছেন প্রভাবশালী প্রতিবেশী আবদুল মান্নান, আশরাফ আলী, শাহজাহান ও সামসুজ্জামান। আমি জমি বুঝে পেতে চাইলে তারা বলে আমাদের জমি নাকি নিলামে তারা কিনে নিয়েছেন। পরে উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে জানতে পারি জমির কোনো নিলাম হয়নি।’

তিনি অভিযোগ করেন, বিষয়টি নিয়ে বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসককে জানানো হলে তারা বামনা থানার ওসিকে ঘটনা দেখতে বলেন। তবে ওসি পাত্তা না দেয়ায় বাধ্য হয়ে অনশনে বসেন।

এ বিভাগের আরো খবর