ঢাকার সাভারে আগুনে পুড়ে যে কারখানায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, সে কারখানাটির কোনো অনুমোদন ছিল না বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ি বঙ্গবন্ধু রোডে ইউনি ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার নামের ওই কারখানা পরিদর্শন শেষে একথা জানান সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম।
কারখানটিতে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার পর নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে তিন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাটি দুঃখজনক। কারখানাটির কোনো ধরনের অনুমোদন ছিল না। অগ্নিকাণ্ডের পরই এই বিষয়গুলো আমরা জানতে পেরেছি।
‘স্থানীয়রাও কারখানাটির বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়গুলো আমাদের জানিয়েছেন। এখানে অনেক শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হতো। এছাড়া কারখানা ঘুরে অগ্নিনির্বাপণ কোনো ব্যবস্থাও আমরা পাইনি। বিনা অনুমতিতে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তারা শিল্পায়ন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে চলতে দেয়া যায় না। আমরা এ ধরনের অনুমোদনহীন কারখানা যাচাই-বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে আশুলিয়া থানা পুলিশকে এ ঘটনায় মামলা নেয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। পুলিশ কাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে আর্থিক সহায়তা করা হবে।’
অভিযোগ উঠেছে, আগুন লাগার পর বাইরে থেকে ফটক তালাবদ্ধ করে নিরাপত্তাকর্মী পালিয়ে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ওই কারখানায় কাজ করা সানোরা বেগমকে খুঁজে পাচ্ছেন না তার স্বামী ঝাল মুড়ি বিক্রেতা আব্দুল হামিদ। কান্নারত অবস্থায় তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বউ এই জুতা ফ্যাক্টরিতে কাম করতো। আগুন লাইগা হে পুইড়া গেছে। আমার বউরে এখনো দেখতে পাই নাই। কেউ আমার বউয়ের লাশটা দেখায় দেন।’
স্থানীয় আটলান্টা গার্মেন্টসের শ্রমিক নুরুল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ফ্যাক্টরির পাশেই জুতার কারখানাটা। ফ্যাক্টরি ছুটি হওয়ার পরেই বাইর হইয়া দেখি আগুন লাগছে। পরে সবাই মিল্লা যে য্যামনে পাড়ছে আগুন নিভাইছে।
‘ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আইছে আগুন লাগার এক ঘণ্টা পরে। প্রথম তিনটা ফায়ার সার্ভিসের ছোট গাড়ি আইছিলো। কিন্তু ওই গুলাতে পানি ছিল না। পরে আরও দুইটা বড় গাড়ি আসছে পানি নিয়া। ততক্ষণে দুইতলা ফ্যাক্টরির পুরাটাই পুইড়া গেছে। ভিতরে তিনজনের লাশ দেখছি আমি।’
ইদ্রিস আলী নামের একজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে মাগরিবের নামাজ শেষে চিল্লাচিল্লি শুইনা বের হইয়া দেখি আগুন। আমাগো বাড়ির পাশেই ফ্যাক্টরিটা। ওরা স্যান্ডেল বানায়। তখন শ্রমিকরা চিল্লিচিল্লি করতেছিলো বেতর থাইকা। ফ্যাক্টিরর বড় বাইরের গেটটাও বন্ধ ছিল।
‘দাড়োয়ান বাইরে থাইকা তালা দিয়া পলাইছিলো। আমি হাতুড়ি আইনা নিচতলার জানলা ভাইঙ্গা অনেকরে বের করছি। ফায়ার সার্ভিসরে ফোন দেয়ার অনেক পরে আইছে তারা।’
মাহমুদুল ইসলাম নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ওই ফ্যাক্টরিতে একশ’র মতো শ্রমিক আছিলো। বেশির ভাগ শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেয় ওনারা। দুই তলায় শেডে কোন জানালা ছিল না।’
ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের ৪ নম্বর জোনের উপপরিচালক আবদুল আলিম বলেন, ‘আমরা তিন মরদেহ উদ্ধার করেছি। তবে কত জন আহত সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। মারা যাওয়া ব্যক্তদের মধ্যে দুইজন নারী ও একজন পুরুষ। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় আমরা পাইনি। এদের মধ্যে দুইজন শ্বাসকষ্টে, আর একজন আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।’
ফায়ার সার্ভিস দেড়িতে আসার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘যানজটের কারণে আমাদের আসতে বিলম্ব হয়েছে। তারপরও ফায়ার সার্ভিসের সর্বোচ্চ চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।’
এর আগে বিকেলে সোয়া ৫টার দিকে আশুলিয়ার এই কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এতে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেলেও আহতদের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।