বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২-৪ লাখে শতাধিক চাকরি, ২ মাস বেতন দিয়ে হাওয়া

  •    
  • ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২১:০৯

কালুখালী উপজেলার পারভেজ মিয়া জানান, সুরুজ মণ্ডলের জাল অনেক বড়। পাংশা, কালুখালী ছাড়াও মাগুরার কিছু লোকের কাছ থেকে একইভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন।

চাকরি দেয়ার কথা বলে শতাধিক যুবকের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সুরুজ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ডিসিএএ নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে বেশি বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে রাজবাড়ীর কালুখালী ও পাংশা উপজেলায় প্রতারণার জাল বুনেছিলেন তিনি।

অভিযুক্ত সুরুজ মণ্ডল কালুখালী উপজেলার মাজবাড়ী ইউনিয়নের খামারডাঙ্গি গ্রামের মৃত নাদের মণ্ডলের ছেলে।

ভুক্তভোগীদের তথ্যমতে, ডিসিএএ নামক ভুয়া প্রতিষ্ঠানটিতে টাকার বিনিময়ে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তাদের একটি চুক্তিপত্র দেয়া হয়।

চুক্তিপত্রে লেখা আছে, ‘কোম্পানির মালিক সুরুজ মণ্ডল। আমার নিজের তৈরি প্রতিষ্ঠান ডিসিএএ। পরবর্তীতে নাম চেঞ্জ (বদল) হতে পারে। আমি একমাত্র মালিক, বাকি সবাই আমার নিয়োগ দেয়া কর্মচারী। চাকরি দেয়ার আগে অঙ্গীকার করছি যে, এই চাকরি আধা সরকারির মতো সুযোগ-সুবিধা দেবে। সর্বনিম্ন বেতন ২৫ হাজার টাকা। অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে পদ অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধি হবে আলোচনাসাপেক্ষে। ছয় মাসের মধ্যে আইডি কার্ড দেয়া হবে।’

নিয়োগপত্রে কোনো ঠিকানা দেয়া ছিল না।

চাকরি পাওয়ার আশায় প্রতারণার শিকার হয়েছেন সাদিকুল ইসলাম, বকুল হোসেন, আব্দুল আলিম, পারভেজ মিয়া, সুমন ইসলাম, চৌধুরী ইমন, সজীব আহমেদ, সাইদুল ইসলাম, রাজিব কুমার, সাগর হোসেন, আলম বিশ্বাস, আশরাফুল ইসলাম, বিপুল রানা, কাজলসহ শতাধিক যুবক। এদের বাড়ি পাংশা ও কালুখালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। এদের কেউ উচ্চ মাধ্যমিক, কেউ স্নাতক পাস। তবে সবাই বেকার ছিলেন। চাকরি পাওয়ার আশায় বিভিন্ন এনজিও থেকে উচ্চসুদে ঋণ নিয়ে সুরুজকে প্রত্যেকেই ২-৩ লাখ টাকা করে দিয়েছিলেন।

সুরুজের প্রতারণার শিকার যুবকরা এখন সর্বস্বান্ত। তাদের আকুতি, ‘আমরা খুব বিপদের মধ্যে আছি। কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। আমাদের রক্ষা করুন।’

ভুক্তভোগীরা জানান, সুরুজ মণ্ডলের প্রতারণার ফাঁদ ছিল খুব সুকৌশলী। চাকরিপ্রত্যাশীদের ঢাকার আশুলিয়ায় একটি অফিসে নিয়ে যেতেন তিনি। সেখানে নিজের লোকজনকেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাজিয়ে তাদের প্রমোশন ও বেশি বেতন দেয়া হয় এমনটি দেখাতেন।

এসব দেখে প্রলুব্ধ হয়ে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা দিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন বেকার যুবকরা। নিয়োগ পেয়ে তারা কেউ রাস্তায়, কেউ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির সামনে দাঁড়িয়ে গাড়ি গণনার কাজ করেছেন। ওটাই ছিল তাদের চাকরি।

চাকরি নেয়ার পর কেউ এক মাস, কেউ দুই মাসের বেতনও পেয়েছেন। এরপর তারা উৎসাহী হয়ে গ্রাম বা প্রতিবেশী বেকার যুবকদেরও চাকরিতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু কিছুদিন পর অফিসও নেই, সুরুজ মণ্ডলও নেই।

প্রতারণার শিকার পাংশা উপজেলার চরঝিকড়ি গ্রামের বকুল হোসেন জানান, চাকরি পাওয়ার আশায় সুরুজ মণ্ডলকে তিনি ২ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এখন তিনি নিঃস্ব। সংসার চালাতে তাই একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করছেন।

কালুখালী উপজেলার বাসিন্দা পারভেজ মিয়া জানান, সুরুজ মণ্ডলের জাল অনেক বড়। পাংশা, কালুখালী ছাড়াও মাগুরার কিছু লোকের কাছ থেকে একইভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন। তার কাছ থেকেও সুরুজ মণ্ডল ২ লাখ টাকা নিয়েছেন। তিনি এই প্রতারণার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।’

কালুখালী উপজেলার মাজবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সুরুজ মণ্ডল একজন প্রতারক। চাকরি দেয়ার কথা বলে বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। আমার চাচাও তার প্রতারণার শিকার। আমি চাচাকে টাকা দিতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু শোনেননি। অনেক দিন আগে সুরুজ মণ্ডল বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেছে। তার মোবাইল ফোন বন্ধ। তার স্ত্রী-সন্তানও বাড়িতে নেই।’

কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সুরুজ মণ্ডলের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিভাগের আরো খবর