ঘুষ লেনদেনের মামলায় কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান একই মামলায় দণ্ড পাওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কর্মকর্তা পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে দুর্নীতির জন্য দোষারোপ করেছেন। দুদকে বাছিরের মতো আরও অনেক কর্মকর্তা আছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার দুপুরে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম তাদের বিরুদ্ধে মামলার রায় পড়ে শোনান।
রায়ে পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। আর তিনি যাকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সেই বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৮ বছর কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করে আদালত।
রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় বসে রায় শোনেন দুই আসামি। বাছিরকে অনেকটা চিন্তিত দেখা গেলেও মিজান ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল ও স্বাভাবিক।
রায় ঘোষণা শেষে সাবেক ডিআইজি মিজান দুদকের সাবেক কর্মকর্তা বাছিরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এ রকম বাছির একজন নয়, আরও অনেক বাছির আছে এই দুদকের মধ্যে। তাদের খুঁজে বের করুন। ’
আদালতে দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল ও আসামিপক্ষে এহসানুল হক সমাজী রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন।
মিজানকে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় ও বাছিরকে দণ্ডবিধির ১৬৫ (এ) ধারায় তিন বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। আর মানি লন্ডারিং আইনের ৪(২) ধারায় বাছিরকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। বাছিরের দুটি দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলে তাকে পাঁচ বছর দণ্ড ভোগ করতে হবে৷
তবে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় দুজনেই দোষী প্রমাণিত হলেও একই ধরনের অভিযোগে দণ্ডিত হওয়ায় এই ধারায় কাউকেই সাজা দেয়া হয়নি।
৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন শেখ মো. ফানাফিল্লাহ।
ওই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র নেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। এরপর আদালত চার্জ গঠনের তারিখ দিয়ে মামলা ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বদলির আদেশ দেন।
২০২০ সালের ১৮ মার্চ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
মামলা রায় পড়ার সময বিচারক শেখ নাজমুল আলম তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘মিজানুর রহমান ও খন্দকার এনামুল বাছির ছিলেন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকতা। তাদের মতো অবস্থানে থেকে এভাবে ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় জড়িত হওয়ার ব্যাপারটি পুরো জাতিকে হতবাক করেছে। তারা সব সরকারি কর্মকর্তার সম্মান নষ্ট করেছেন।’