ঘাসে অতিরিক্ত নাইট্রেটের প্রভাব ও মিশ্র ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ১১ জেব্রার মৃত্যু হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
সচিবালয়ে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্তের প্রতিবেদন গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
মন্ত্রী বলেন, ‘জেব্রাদের যে ঘাস খেতে দেয়া হয় সেটার মধ্যে অতিরিক্ত নাইট্রেট পাওয়া গেছে। এর প্রভাব ও মিশ্র ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণেই জেব্রাগুলোর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
‘ঘাসে সাধারণত ইউরিয়া সার দেয়া হয়। এটি ছিটানোর সঙ্গে সঙ্গে পশুকে খেতে দিলে এমন হতে পারে। তবে সার দেয়ার তিন, চার বা ছয় সপ্তাহ পরে ওই ঘাস পশুকে খেতে দিলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।’
তবে জেব্রা সুরক্ষায় যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের সবার মধ্যে দায়িত্ব পালনে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও জানান মন্ত্রী। কিন্তু তাদের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা তিনি উল্লেখ করেননি।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম দিকে তিনটি জেব্রার মৃত্যু ধামাচাপা দেয়া এবং আঘাতজনিত কারণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জেব্রা তিনটির পেট কাটা হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। কারা এ কাজটি করেছেন সে বিষয়ে গভীর তদন্ত প্রয়োজন বলেও জানায় কমিটি।
‘এ ছাড়া কর্তব্যরত ভেটেরিনারি অফিসারের চাহিদা অনুসারে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাফারি পার্ক মেডিক্যাল বোর্ডের সভা আহ্বান করার কথা থাকলেও এতগুলো জেব্রার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরও জরুরি ভিত্তিতে কোনো সভা না হওয়ায় কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার পরিচয় পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রাণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে জিডি করার প্রচলন থাকলেও এ ক্ষেত্রে থানায় কোনো জিডি করা হয়নি। এ বিষয়টি রহস্যজনক। এ ছাড়া পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব গত ২২ জানুয়ারি সাফারি পার্ক পরিদর্শন করলে সেদিন পর্যন্ত ৮টি জেব্রা মারা গেলেও কেউ তাকে এ বিষয়ে অবহিত করেননি।
‘এতে প্রতীয়মান হয়, প্রথম থেকেই জেব্রা মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বিষয়টি অস্বাভাবিক, অগ্রহণযোগ্য ও সরকারি কর্মী আচরণের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এটি দায়িত্ব অবহেলার মধেই পড়ে।’
এসব কারণে তদন্ত কমিটির মতামত বিবেচনায় দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে ফৌজদারি মামলা ও বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এগুলো ছাড়াও সাফারি পার্কের উন্নয়নে ২৪টি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এগুলোর মধ্যে ১১টি স্বল্পমেয়াদি, ৪টি মধ্যমেয়াদি এবং ৯টি দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ। এগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।