বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সাতক্ষীরা। সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি খাত থেকে এ জেলার রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে। সত্তরের দশক থেকে সাতক্ষীরাবাসীর আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে চিংড়ি সম্পদ বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
মাছের জেলা হিসেবে খ্যাত সাতক্ষীরায় গলদা ও বাগদা চিংড়ি থেকে শুরু করে ভেটকি, পারশে, টেংরা, রুই ও কার্প জাতীয়সহ পাওয়া যায় আরও অনেক মাছ। স্থানীয়ভাবে এসব মাছকে বলা হয় সাদা পানির মাছ।
এখানে পাওয়া যায় না এমন কোনো মাছ নেই। খাল-বিল, নদী-নালা, হাওড়-বাওড় এমনকি প্লাবন-ভূমিতেও হয় মাছের চাষ।
করোনার প্রভাবে গত দুই বছর সাতক্ষীরার মাছ চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও চলতি বছর উৎপাদনের পাশাপাশি মাছের দামও বেশি হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে লাভের আশা করছেন তারা।
মাছ বাজারে ব্যবসায়ীরা। ছবি:নিউজবাংলা
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সাতক্ষীরায় মাছের ঘের রয়েছে ৬৬ হাজার, আয়তনে ১০ লাখ ৭২ হাজার বিঘা। আর মাছ চাষি প্রায় ৮০ হাজার। এ জেলায় গত বছর সাদা মাছ উৎপাদন হয়েছিল ৭০ হাজার মেট্রিক টন। আর এই বছর সাদা মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ হাজার মেট্রিক টন।
জেলার বৃহৎ মৎস্য বাজার বিনেরপোতা বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ মন্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বছর মাছের বাজার স্বাভাবিক। আর দামও বেশি। গত দুই বছরের তুলনায় প্রতি কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে। যে মাছ গত বছর কেজি প্রতি ছিল ১০০ থেকে ২০০ টাকা, সেই মাছ এবার বিক্রি হচ্ছে ২০০-৩৫০ টাকায়।
শহরের সুলতানপুর মৎস্য বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব বলেন, ‘জেলার চাহিদা মিটিয়ে সাতক্ষীরা থেকে প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ ট্রাক সাদা মাছ রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে। গত বছর ন্যায্য বাজারমূল্য না পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছিল ব্যবসায়ীরা। তবে এ বছর আমরা ধারণা করছি, চাষি ও ব্যবসায়ীরা তাদের লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারবে।’
বাজারে আছে মাছের পর্যাপ্ত যোগান। ছবি:নিউজবাংলা
মাছ চাষি ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘রুই কাতলা থেকে শুরু করে চিংড়ি মাছের দামও ভালো পাচ্ছি। আর এই ভাবে মাছের দাম শেষ পর্যন্ত থাকলে গত দুই বছরের লোকসান পুষিয়ে লাভবান হব।’
প্লাবন ভূমিতে দুই বছর ধরে মাছ চাষ করছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। তারা জানান, সদরের কয়েকটি প্লাবন ভূমি রয়েছে যেখানে মাছ চাষে প্রায় কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সেখান থেকে লাখ লাখ টাকা লাভের মুখ দেখছেন এই ব্যবসায়ীরা।
জেলা মৎস্য অফিসার আনিছুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সবসময় চাষিদের পাশে আছি। আশা করছি, চলতি অর্থ বছরে গত দুই বছরের করোনাকালীন ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন মাছ উৎপাদন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্টরা ।’