সার কেলেঙ্কারি মামলায় পরিচয় গোপন করে বদলি আত্মসমর্পণ করতে এসে ফেঁসে গেছেন ফাহিম আহমেদ নামে এক ব্যক্তি।
৬১৯ কোটি টাকা মূল্যের সার আত্মসাতের অভিযোগে মেসার্স নবাব অ্যান্ড কোম্পানি নামের এক পরিবহন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্নধার নবাব খানের নামে মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়। মঙ্গলবার ওই মামলায় নবাব খানের পরিবর্তে ফাহিম ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম রেজাউল করিম চৌধুরীর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
তবে কারাগারে নেয়ার আগেই কোর্ট হাজতে ফাহিম নিজের ভিন্ন পরিচয় জানিয়ে দাবি করেন, তিনি নবাব খান নন। বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে পুলিশ তার বিরুদ্ধে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় ছদ্মবেশে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেছে।
মতিঝিল থানায় আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোতালেব হোসেন এ খবরের সত্যতা নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন। মামলাটি মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক শফিক আহমেদ তদন্ত করছেন বলেও জানান তিনি।
কোতোয়ালি থানা সূত্রে জানা যায়, ফাহিম আহমেদ নামে ওই ব্যক্তিকে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, নবাব খানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সার উৎপাদন ও আমদানিকারক সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।
গত ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন বিসিআইসির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম-বাণিজ্যিক) মো. সাইফুল আলম।
মামলা দায়েরের পর নবাব খান হাইকোর্টে জামিনের জন্য যান। হাইকোর্ট তাকে চার সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন।
সে অনুযায়ী মঙ্গলবার নবাব খানের হয়ে ফাহিম আহমেদ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান।
আদালত জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
এরপর কোর্ট হাজতে তিনি নিজেকে ওই মামলার আসামি নন বলে দাবি করেন। পরে ডিএমপির অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি নিশ্চিত হন৷
আদালত সূত্রে জানা যায়, প্রকৃত আসামি ফাহিম আহমেদ নন, নিশ্চিত হওয়ার পর তার হাজতি পরোয়ানার আদেশ বাতিল করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করে তাকে পুলিশে দেয়া হয়।
এর আগে বিসিআইসির চেয়ারম্যান শাহ মোহা. ইমদাদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদেশ থেকে আমদানি করা ৬৬ হাজার ৮৭৪ টন ইউরিয়া সার বুঝিয়ে দিচ্ছে না মেসার্স নবাব অ্যান্ড কোম্পানি। এজন্য বার বার তাগাদা দিয়েও লাভ হয়নি। তাই আমরা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নবাব খানকে আসামি করে মামলা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী ৫০ দিনের মধ্যে বন্দর থেকে আমাদের গুদামে সার বুঝিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু তিনি দেড় বছরের বেশি সময় ধরে সার বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। বাইরে থেকে আমদানি করা সার খালাসের পর কোম্পানির মালিক তা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রেখেছিলেন। কিন্তু দফায় দফায় চিঠি দিলেও তিনি বিসিআইসিকে পাত্তা দিচ্ছেন না।
এরপর তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে মতিঝিল থানায় এই মামলা করে বিসিআইসি।