রাজধানীর নীলক্ষেতে বইয়ের মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৮ মিনিটে এই আগুনের সূত্রপাত। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। রাত ৮টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান নিউজবাংলাকে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিউমার্কেট থানার ডিউটি অফিসার শাহীনুর আক্তার বলেন, ‘আগুন লাগার পর দ্রুতই ছড়িয়ে যায়। কোনো হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এবং পুলিশ সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।’
মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকলেও বইয়ের এই মার্কেট এদিন খোলা ছিল বলে জানিয়েছেন দোকানিরা।
কয়েকজন দোকান মালিক জানান, করোনায় দীর্ঘদিন মার্কেট বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিয়ে মার্কেট মঙ্গলবারেও খোলা রাখা হয়। আগুনে পোড়ার পাশাপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণে দেয়া পানিতেও ভিজে গেছে অনেক বই।
ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টাফ অফিসার মো. শাহজাহান শিকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মার্কেটে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা না থাকায় দোকানিরা প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে পারেননি। যে কারণে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে আগুন ছড়িয়েছে।’
তিনি জানান, মার্কেটের লাভলি হোটেলের অংশ থেকে আগুন অন্য দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এর কারণ ও উৎপত্তিস্থল এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
মার্কেটে আগুনকে কেন্দ্র করে প্রচুর মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় করে। কিছুক্ষণ পরপর পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস তাদের সরিয়ে দিলেও ফের জড়ো হন তারা। এতে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে বেগ পেতে হয়।
আগুন লাগার পর অনেক বই বিক্রেতা দোকান থেকে তাদের বই বের করে নিয়ে আসতে পারলেও অধিকাংকই পারেননি।
অগ্নিকাণ্ডের সময় বই মার্কেটের ভেতরে ছিলেন বাংলাবাজার থেকে নীলক্ষেতে বই সরবরাহ করা আবদুল জলীল। তিনি বলেন, ‘আগুনে কয়েকটা দোকানের একটা বইও বের করা যায়নি। সব পুড়ে ছাই।’
তিনি জানান, এমন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বাবুল বুক কর্নার, রাজু বুক সেন্টার, চারুকলা, গীতাঞ্জলি, ফ্রেন্ডস বুক কর্নার, তপন লাইব্রেরি, সোহেল লাইব্রেরি, মিন্টু লাইব্রেরি, মাইয়ের দোয়া লাইব্রেরি, ইব্রাহিম বই ঘর, আমির বুক সেন্টারসহ আরও কয়েকটা দোকান।
ইউনাইটেড পাবলিকেশনস নামের একটি দোকানে কাজ করা রবিউল বলেন, ‘বাবুল বুক সেন্টারে আমার বন্ধু হাশেম কাজ করে। তিনি সন্ধ্যায় দোকান বন্ধ করে বিডিআর তিন নম্বর গেইট পর্যন্ত গেছেেন। এর মধ্যেই তাকে আমরা ফোন দিয়ে আগুন লাগার ঘটনা জানাই। তিনি সেখান থেকে আসতে আসতে সব শেষ।
‘যাদের দোকান বন্ধ ছিল তারাই মূলত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যাদের দোকান খোলা ছিলো তারা কিছু হলেও বের করতে পেরেছেন।’
আখন বই বিতানের মালিক সুলতান বলেন, ‘আমির বুক সেন্টার সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। দোকানটার মালিক আমির একটু আগে বেহুঁশ হয়ে রাস্তায় পড়ে গেছেন। শুধু তার দোকান না এখানে ৭০-৮০টা দোকান পুড়ে গেছে।’
বাবুপুরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য আবদুর রহীম বলেন, ‘শাহজালাল বুক সেন্টারে বৈদ্যুতিক যন্ত্র দিয়ে ওয়ারিংয়ের কাজ করেছে। সেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত। আমরা ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিলে তারা একটি ইউনিট পাঠায়। সেটি ব্যর্থ হলে পরে তারা আরও ইউনিট পাঠান।’
দেশের সবচেয়ে বড় বইয়ের বাজার হিসেবে পরিচিত নীলক্ষেত বই মার্কেটে এর আগে ২০১৭ সালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের পাশের এই মার্কেটটিতে সব সময়ই শিক্ষার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।