এ দেশের একটি শ্রেণি আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে জানে না বলে আক্ষেপ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ‘একটা শ্রেণি আছে যারা পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ থাকতেই পছন্দ করে। তারা আত্মমর্যাদা বিকিয়ে দিয়েই আত্মতুষ্টি পায়। সে কারণে দেশের উন্নয়ন তাদের মনঃপূত হয় না, তারা উন্নয়ন দেখতে পায় না।’
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন দলের অন্য নেতারা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কথা বলতেন, বাংলাদেশের মাটি এত উর্বর, এখানে যেমন অনেক ফসলও হয়, আবার সেখানে পরগাছা, আগাছাও জন্মে।
‘দেশে একটা শ্রেণি আছে যাদের কাছে দেশ ও জাতি কিছু পেলে তাদের মনঃপূত হয় না। কারণ পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ থাকতেই তারা পছন্দ করে। তারা কখনও আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে জানে না।
‘আমরা যতই উন্নতি করি, যতই এগিয়ে যাচ্ছি, সারা বিশ্ব যখন সেই উন্নয়ন দেখে, আমাদের দেশের কিছু লোক কিন্তু চিরদিন অন্ধই থাকে। তারা উন্নয়ন দেখে না, দেখতে পায় না। তারা এই অর্জনের কথা বলতে গেলেও তাদের মধ্যে দ্বিধা কাজ করে।’
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রহমান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং আবু আহমেদ মান্নাফীও এতে বক্তব্য রাখেন। গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
আলোচনায় ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনের যত ঝুঁকি নিয়েছেন এই বাঙালির জন্য। ঝুঁকি নিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষের জন্য। মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ের জন্যই সংগ্রাম করে গেছেন।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন হয়েছি বলেই বিশ্ব দরবারে মর্যাদা পেয়েছি। স্বাধীন হয়েছি বলেই ভাষার জন্য যারা রক্ত দিয়েছে, সেই রক্তের মর্যাদা তারা পেয়েছে।
‘জাতির পিতাই বলতেন, মহৎ অর্জনের জন্য মহান আত্মত্যাগ দরকার। আর সেটাই আমরা করতে পেরেছি। আমাদের এই মর্যাদা নিয়েই চলতে হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। কিন্তু একটি বিষয় সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে, যখনই বাঙালি কিছু পায় বা মর্যাদা অর্জন করে বা বাঙালি এগিয়ে যেতে থাকে উন্নয়নের দিকে, তখনই কিন্তু আবার অনেক চক্রান্ত ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
বক্তব্যের শেষের দিকে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক’ বলার পর শেখ হাসিনা স্লোগান সংশোধন করে বলেন, ‘এখন আর চিরজীবী লাগবে না। জয় বাংলা বললেই হবে।’
এরপর তিনি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ধরেন এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আওয়াজ কই?’
এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা জয় বাংলা স্লোগান ধরেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাদের সঙ্গে গলা মেলান।