মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামের রাকিবুজ্জামান রিপন শ্বশুরবাড়ি থেকে নিখোঁজ হন পাঁচ বছর আগে। হত্যার পর গুম করার অভিযোগে সে সময় রিপনের স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও চাচা-শ্বশুরের নামে মামলা করেন রিপনের বাবা মনিরুল ইসলাম।
সেই রিপনকে মঙ্গলবার গাজীপুর থেকে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পুলিশ জানায়, রিপন এতদিন আত্মগোপনে ছিলেন।
পিবিআই কুষ্টিয়ার পরিদর্শক মনিরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ খবর শুনে স্ত্রী শ্যামলী খাতুন নিউজবাংলাকে জানান, তার ও তার পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ফেলে রেখে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন রিপন।
পিবিআই পরিদর্শক মনিরুজ্জামান জানান, শ্যামলীকে বিয়ের পর রিপন গাংনীর ভরাট গ্রামে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। তাদের মধ্যে কলহ চলছিল। ২০১৭ সালের ৮ জুলাই বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে রিপনকে আর পাওয়া যায়নি।
খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে রিপনের বাবা মনিরুল ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর শ্যামলী ও তার পরিবারের লোকজনের নামে মেহেরপুর আদালতে গুম ও হত্যার অভিযোগে মামলা করেন। আদালত থেকে সে সময় জামিন নেন আসামিরা।
মনিরুজ্জামান আরও জানান, আদালতের নির্দেশে সদর থানা পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করে। তবে রিপনকে উদ্ধার না করতে পেরে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তাতে বলা হয়, রিপন আত্মগোপন করেছেন। আদালত মামলাটি ফের তদন্তের জন্য পিবিআই কুষ্টিয়াকে নির্দেশ দেয়।
রিপন ও শ্যামলীর পরিবারকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ ও নানা সূত্র ধরে অবশেষে রিপনকে গাজীপুর থেকে আটক করা হয়। পরিচয় বদলে তিনি সেখানে একটি কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ নেন, আরেকটি বিয়েও করেন।
রিপনের স্ত্রী শ্যামলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যখন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন আমার স্বামী রিপন আমার ও আমাদের পরিবারের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এলাকায় সে বেশ কিছু ঋণ নেয়। সে ঋণের বোঝা আমার কাঁধে এসে পড়ে।
‘বাধ্য হয়ে আমি রিপনকে ২০২১ সালের ১৩ মে তালাক দেই। আজ সে জীবিত উদ্ধার হয়েছে, সত্যের জয় হয়েছে।’
মেহেরপুর আদালতের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, পিবিআই রিপনকে মঙ্গলবার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে। ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে মুচলেকা লিখিয়ে নিয়ে বাবার কাছে রিপনকে হস্তান্তর করেন বিচারক তারিক হাসান। মুচলেকায় বলা হয়, আদালত যখন চাইবে রিপনকে তখন হাজির হতে হবে।