প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য কমিশনার নিয়োগে ১৩ জনের নামের তালিকা থেকে কমিয়ে সুপারিশের জন্য ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করতে সার্চ কমিটি শেষ বৈঠক শুরু করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় এ বৈঠক শুরু হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন কমিটির সভাপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
এতে উপস্থিত রয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
গতকাল সোমবার সার্চ কমিটি বৈঠক করে ১৩ জনের নাম চূড়ান্ত করে।
কমিটি সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নামের তালিকা পাঠানোর জন্য নাম চূড়ান্ত করা হবে এ বৈঠকে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম বৈঠকের পর সার্চ কমিটির সদস্যদের এটি সপ্তম বৈঠক, আর বিশিষ্টজনদের সঙ্গে করেছে চারটি বৈঠক।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তারপর থেকে কমিশন এখন পর্যন্ত শূন্য রয়েছে।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে এবার আইন করেছে সরকার। এর আলোকে গঠন করা হয়েছে সার্চ কমিটি। এর আগের দুটি কমিশনও সার্চ কমিটি গঠন করেই করা হয়েছিল, যদিও তখন সুনির্দিষ্ট কোনো আইন ছিল না।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি। এই কমিটি নিজেদের মধ্যে বৈঠক ছাড়াও বিশিষ্টজন ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করে।
কমিটি নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কাছ থেকে নাম চায়। এমনকি ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেউ আগ্রহী হলে তারও নাম জমা দেয়ার সুযোগ ছিল।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নাম পাঠানোর সুযোগ ছিল। পরে দুই দিন বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসা পরামর্শের ভিত্তিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টা পর্যন্ত আবার নাম পাঠানোর সুযোগ দেয়া হয়।
তবে যে কারণে এই বাড়তি সময় দেয়া হয়, সেটি সফল হয়নি। বিএনপি বর্ধিত সময়েও কোনো নাম প্রস্তাব করেনি।
জমা পড়া ৩২২টি নাম গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয়। তাদের নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষণের মধ্যে শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়।
এদিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) সামসুল আরেফিন জানান, আরও দু-একটি বৈঠক করে ১০ জনের চূড়ান্ত তালিকা করে রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া হবে।
এর আগেও দুটি নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটি গঠন করে করা হয়েছিল। এই কমিটি রাষ্ট্রপতিকে নাম সুপারিশ করার পর ২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ ও ২০১৭ সালে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে আপিল বিভাগ অসাংবিধানিক ঘোষণার পর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে আওয়ামী লীগ। তবে এর প্রতিবাদে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহতের ডাক দিয়ে আন্দোলনে নামে বিএনপি।
ব্যাপক প্রাণহানি ও সহিংস সেই ভোটের পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট অংশ নেয় দলীয় সরকারের অধীনেই। তবে সেই নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে- এমন একটি অভিযোগ তোলে তারা। এ কারণে দলীয় সরকারের অধীনে ভোটে যেতে চাইছে না তারা।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা একটি মীমাংসিত ইস্যু। শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন করতে এবার নির্বাচন কমিশন আইনও করা হয়েছে। আর এই আইনের আলোকেই গঠন করা হয়েছে সার্চ কমিটি।