নতুন যে নির্বাচন কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে, সেটি সদ্য বিদায়ী কমিশনের মতোই হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘সার্চ কমিটি যাদের দিয়ে করেছে তারা প্রত্যেকেই তাদের (আওয়ামী লীগের) লোক। আজকে আবার নামগুলো পাঠাবে রাষ্ট্রপতির কাছে, যাদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে দেখা যাবে তারা সেই হুদার মতোই লোক। অনেকেই তাকে বেহুদার মতন মনে করেন।’
মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে কৃষক দল আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় বিএনপি মহাসচিব এমন মন্তব্য করেন। ফসলের মাঠে কৃষকের আত্মহত্যায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এই আলোচনা আয়োজন করা হয়।
ফখরুল তার আলোচনায় কৃষকদের ‘দুর্দশা’, সরকারের বিরুদ্ধে অপশাসনের অভিযোগ ছাড়াও কথা বলেন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছ নাম সুপারিশ করতে যে সার্চ কমিটি গঠন হয়েছে, তারা এখনও নাম দিতে পারেনি। তবে বেশ কিছু বৈঠকের পর জমা পড়া তিন শতাধিক নাম থেকে ১৩ টি নামের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে, সেটি ১০ জনে নামাতে আজই আবার বসছে সার্চ কমিটি।
এর আগে ২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন এবং ২০১৭ সালে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনও সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিল। দুই বারই রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেয়ার পাশাপাশি ও সার্চ কমিটিতে নামও জমা দিয়েছিল বিএনপি। তবে এবার তারা এই উদ্যোগে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করেনি। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের পুরনো দাবিতে ফিরে গেছে তারা। দাবি করছে, বর্তমান সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে। তারা এসে নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এবং সেই সরকার ও নির্বাচন কমিশনই জাতীয় নির্বাচনে উদ্যোগ নেবে।
ফখরুল এই দাবির কথা তুলে ধরে বলেন, ‘ক্ষমতাসীন সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। এখন তারা আবার নির্বাচিত হওয়ার জন্যে তাদের মতন করে ইলেকশন কমিশন গঠন করবে। সে জন্য সার্চ কমিটি গঠন করেছে। আইনও তৈরি করেছে। সবগুলো জনগণকে বোকা বানানোর জন্য।'
মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার অভিযোগ এনে সদ্য বিদায়ী সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে বিচারের আওতায় আনার কথাও বলেন ফখরুল।
‘সরকারের আগ্রাসনের কারণে শফিউদ্দিনের আত্মহনন’
শেরপুরে কৃষক শফিউদ্দিন ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীদের কারণে আত্মহত্যা করেছেন বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। বলেন, ‘বর্তমানে ভোটারবিহীন সরকারের যে দুঃশাসন,নৈরাজ্য, ফ্যাসিবাদের যে আগ্রাসন, তার বিরুদ্ধে শফিউদ্দিনের যে আত্নহনন হচ্ছে একটি প্রতিবাদ।’
গত ২ ফেব্রুয়ারি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার মানিকচাঁদ গ্রামে সেচ পাম্প স্থাপনে বাধা পেয়ে নিজের ফসলের মাঠে ফাঁসির মঞ্চ বানিয়ে আত্মহত্যা করেন শফিউদ্দিন। তার পরিবারকে সহানুভুতি জানাতে কৃষকদলের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলেও গিয়েছিল। তারাই ঢাকায় প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সালে ক্ষমতায় আসার পর তাদের দুঃশাসনের কারণে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ সংগঠিত হয়েছিল। যেখানে লক্ষাধিক মানুষ না খেয়ে মারা গেছে। রংপুরের বাসন্তী মাছের জাল পড়ে লজ্জা নিবরণ করেছেন।
‘এখন মা মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের সামনে লাফ দিয়ে পড়ে আত্নহত্যা করছে। বাবা মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যা করছে। চাঁদপুরে সন্তান বিক্রি করে দিয়েছে।’
গত বছর ৬৭ লক্ষ টন খাদ্য আমদানি করতে হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।’
তিনি বলেন, ‘কৃষকদের জন্য এই সরকার কিছুই করে নাই। যারা প্রান্তিক মানুষ আছে, তাদের আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। তার ৯০ শতাংশ আওয়ামী লীগের দালালদের কাছে পৌঁছে গেছে।
‘কৃষির উন্নয়নের জন্য যে ট্রাক্টর মেশিন দেয়া শুরু করেছিল, তার ৯০ শতাংশ আওয়ামী লীগের ঘরে চলে গেছে। ব্যবসায়ীরা পরিস্কার করে বলেছে তারা কোনো প্রণোদনা পায় নাই।’
কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলও আলোচনায় বক্তব্য রাখেন।