কক্সবাজারের মহেশখালীতে নিজের বসতভিটা রক্ষায় সাতটি সিসি ক্যামেরা বসিয়েছিলেন রওশন আলী। কিন্তু এতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। রাতের আঁধারে তার বসতভিটায় হামলা, লুটপাট ও ফাঁকা গুলি করে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে।
দফায় দফায় হামলা করে ইতোমধ্যে চারটি সিসি ক্যামেরা লুট করে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। শুধু তাই নয়, হামলা করে ঘর ভেঙ্গে দেয়ায় ত্রিপল টাঙিয়ে সম্প্রতি খোলা আকাশের নিচে পরিবার নিয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন রওশন। তিনি মহেশখালী পৌরসভার উত্তর ঘোনারপাড়ার হাজী মিয়া হোসনের ছেলে।
রওশনের অভিযোগ, হামলার ঘটনায় তিনি মহেশখালী থানায় মামলা করতে চাইলেও প্রভাবশালীদের ইন্ধনে মামলাটি নেয়নি পুলিশ। পরে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় কায়সার সিকদারকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের বিরুদ্ধে মহেশখালী জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন তিনি। মামলাটি কক্সবাজার পিবিআই’কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
রওশন জানান, গত ১১ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে সিকদার পাড়ার হাশেম সিকদারের পুত্র কায়সার সিকদারের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একটি দল তার বাড়িতে হামলা চালায় এবং স্বজনদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে।
এ সময় তার স্ত্রী রহিমা আক্তার প্রাণরক্ষায় চিৎকার করলে স্কুলপড়ুয়া মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা, ফুফু বেগম খাতুন ও ভগ্নিপতি আব্দুল আজিজকে মারধর করে সংঘবদ্ধ দলটি। পরে ৯৯৯-এ কল দিলে হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলের একপাশে খোলা আকাশের নিচে ভীত সন্ত্রস্ত সন্তানদের নিয়ে বসে আছেন রওশন ও তার স্ত্রী রহিমা আক্তার।
রহিমা বলেন, ‘মহেশখালীতে জমির দাম বাড়ায় আমার স্বামীর কেনা জমিটির ওপর কায়সার সিকদারের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে। প্রথমে তিনি জমিটি বিক্রি করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু এতে রাজি না হলে তারা যখন-তখন হামলা করছে। আতঙ্ক আর ভয়ে আমার ছেলেমেয়েরা কাঁদছে।’
ভুক্তভোগী রওশন বলেন, ‘গোরকঘাটা মৌজার ২৪৫২-৬২ খতিয়ানের ৬০ শতক জমির ক্রয়সূত্রে মালিক আমি। বসতভিটা রক্ষায় সিসি ক্যামরা স্থাপন করেছিলাম। তারপরও একের পর এক হামলা চালাচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্রটি।’
প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ হোসেন ও আব্দুল হাসেম জানান, ‘স্থানীয় নজু মিয়ার ছেলে আব্দুল আজিজের সঙ্গে জমি নিয়ে রওশন আলীর বিরোধের কথা শোনা গেলেও কায়সার সিকদারে এখানে কোনো সত্ত্ব নেই।’
গোরকঘাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়াম্যান শামশুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পৌর মেয়র মকছুদ মিয়ার অনুরোধে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। জমিটির কাগজপত্র পর্যালোচনা করি। সেখানে অভিযুক্ত কায়সার সিকদার ও তার পক্ষের কোনো জমি নেই।’
জমির ওয়ারিশ নামধারী মাবিয়া জানান, ‘এটি আমার পৈত্রিক সম্পত্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিচার চলছে। আমরা কোনোভাবে তার বসতবাড়িতে হামলা করিনি। সে একটি মিথ্যা মামলা করেছে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কায়সার সিকদার বলেন, ‘রওশন আলীর বসতবাড়িতে আমি কেন হামলা করব? এখানে কি আমার কোনো স্বত্ত্ব আছে? আমি ওই বিরোধপূর্ণ জমির শালিসকারকদের একজন।’
মামলা না নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে মহেশখালী থানার ওসি মো. আব্দুল হাই বলেন, ‘এ রকম যদি কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে অবশ্যই পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’