বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সুজানা কোথায়?

  •    
  • ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৩:২১

আমেরিকান নাগরিক সাফায়েত মাহাবুব ফারাইজীর মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই পলাতক তার কথিত বান্ধবী সুজানা তাবাসসুম সালাম। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ। সুজানার গা ঢাকা দেয়ার ঘটনায় রহস্য আরও জটিল হয়েছে।   

আমেরিকান নাগরিক সাফায়েত মাহাবুব ফারাইজীর মৃত্যু রহস্যের সুরাহা হয়নি প্রায় দুই মাসেও। সাফায়েতকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগে মামলা করেছেন তার মা শামীমুন নাহার লিপি। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়াই মৃত্যুর কারণ। কিডনি জটিলতায়ও ভুগছিলেন তিনি।

সাফায়েতের মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই পলাতক তার কথিত বান্ধবী সুজানা তাবাসসুম সালাম। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ। সুজানার গা ঢাকা দেয়ার ঘটনায় রহস্য আরও জটিল হয়েছে।

দুই মাস আগে সাফায়েতের মরদেহ উদ্ধারের আগে-পরের ঘটনা অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। দেখা গেছে, ঘটনাটির কোনো কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো সাফায়েতের মায়ের করা মামলায় পুলিশের দুই সদস্যও আসামি হয়েছেন। সম্প্রতি ওই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তারা এখনও সুজানার অবস্থান চিহ্নিত করতে পারেনি।

রাজধানীর ভাটারার নূরের চালা এলাকায় ‘নোভা মঞ্জিল’ নামের একটি ভবন থেকে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সাফায়েতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

সাফায়েত মাহাবুব ফারাইজী

এর প্রায় ১৫ ঘণ্টা আগে ভোররাত ৪টার দিকে সুজানাকে নিয়ে নোভা মঞ্জিলে যান সাফায়েত। ভবন মালিকের ৪ তলার ফ্ল্যাটের একটি কক্ষ ১৩০০ টাকায় ভাড়া নেন তারা। ভবন মালিক কামরুল হক অনেক দিন ধরেই তার ফ্ল্যাটের ওই কক্ষ ‘শেয়ারড হাউজ’ হিসেবে ভাড়া দিচ্ছেন। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সেখানে এর আগেও থেকেছেন সাফায়েত ও সুজানা।

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২৬ ডিসেম্বর দুপুরে সুজানা তাড়াহুড়ো করে ওই ভবন থেকে বেরিয়ে যান। ফ্ল্যাটের মালিক কামরুল হক সে সময় বাইরে ছিলেন। সন্ধ্যায় তিনি ফেরার পর শেয়ারড হাউজের টয়লেটে সাফায়েতের নিথর দেহ দেখতে পান।

এ ঘটনার পর থেকে সুজানা উধাও। ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে তার বাসাতেও ফেরেননি। সাফায়েতের মরদেহ উদ্ধারের পর একটি অপমৃত্যুর মামলা করে ভাটারা থানা পুলিশ। তবে সাফায়েতের মা শামীমুন নাহার লিপির দাবি, তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

এ অভিযোগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে হত্যা মামলা করেন লিপি। মামলায় সুজানা ও ঢাকা মহানগর পুলিশের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ তয়াছির জাহান বাবুসহ আটজনকে আসামি করা হয়।

আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে পিবিআইকে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অন্য সংস্থাগুলোও ছায়া তদন্ত করছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সুজানা তাবাসসুম সালামকে পাওয়া গেলে সাফায়েতের মৃত্যুরহস্য উন্মোচিত হবে।

ভাটারার এই নোভা মঞ্জিলে ছিলেন সাফায়েত ও সুজানা

নোভা মঞ্জিলে যা ঘটেছে

ভাটারার পশ্চিম নূরের চালা এলাকার মৈত্রী সড়কে ‘নোভা মঞ্জিল’ এর অবস্থান। বারিধারাসংলগ্ন পাঁচতলা এই ভবনের মালিক তার নিজের ফ্ল্যাটের একটি কক্ষ স্বল্প সময়ের জন্য অতিথিদের ভাড়া দেন।

বাড়িটির চারতলায় কামরুল হকের ফ্ল্যাটে প্রবেশের পর বাম পাশে একটি কক্ষ। সেখানেই ছিলেন সাফায়েত ও সুজানা। ফ্ল্যাটের অন্য পাশের আরেকটি কক্ষে স্ত্রী অঞ্জলী শেখ শীলাসহ থাকেন কামরুল হক।

ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, যে কক্ষে সাফায়েত-সুজানা ছিলেন তাতে একটি খাট, সাইড টেবিল, সিঙ্গেল সোফা, একটি টেবিল ও কয়েকটি চেয়ার রয়েছে। কক্ষের সঙ্গেই একটি টয়লেট। সেখানে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় সাফায়েতকে।

এই কক্ষ ভাড়া নেন সাফায়েত ও সুজানা

ফ্ল্যাট ও ভবনের মালিক কামরুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই দিন ভোর ৪টার দিকে নোভা মঞ্জিলের সামনে এসে ফোনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন সুজানা। পরে সাফায়েতও কথা বলেন। তাদের অনুরোধ এবং পূর্ব পরিচিত হওয়ার বাড়িতে দুজনকে থাকতে দিই।

তিনি বলেন, ‘সাফায়েত তার মায়ের অসুস্থতার সময়েও সুজানাসহ আমার বাড়িতে ছিল। ওই দিন ভোরে আসার পর তারা থাকতে দেয়ার অনুরোধ করে। নিচতলায় আমার ছেলে লাবিব থাকে। তাকে বলার পর সে গেট খুলে দেয়।’

কামরুল হকের ছেলে নাজমুল হক লাবিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আব্বু আমাকে বলার পর গেট খুলে দেই। ভাই-আপুর (সাফায়েত-সুজানা) সঙ্গে আমার হাই হ্যালো হয়। এরপর তারা ওপরে চলে যান।’

সাফায়েত ও সুজানা চারতলায় ওঠার পর সাফায়েতকে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হয়েছিল বলে জানান কামরুল। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাফায়েতের কথা জড়িয়ে আসছিল। মনে হয়েছে, কিছু খেয়েছে। তবে আমার বেশি কথা হয়নি। সকালে অফিসে যেতে হবে বলে আমি দ্রুতই ঘুমাতে যাই।’

কামরুল হক জানান, সকাল ১০টার দিকে তিনি অফিসে চলে যান। ফ্ল্যাটে তখন নিজের কক্ষে তার স্ত্রী এবং শেয়ারড হাউজে সাফায়েত-সুজানা ছিলেন। বের হওয়ার সময় সাফায়েতদের সঙ্গে তার কোনো কথা হয়নি। অতিথিদের বেলা ২টায় চলে যাওয়ার কথা ছিল বলেও জানান কামরুল।

অফিস থেকে কামরুল বাসায় ফিরে আসেন সন্ধ্যায়। কেয়ারটেকার মাইনুদ্দিন এ সময় তাকে জানান, সুজানা দুপুরে বের হয়েছেন, কিন্তু সাফায়েত বের হননি।

এরপর কামরুল বাড়ির কেয়ারটেকার মাইনুদ্দিনকে নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে যান। মাইনুদ্দিন শেয়ারড হাউজের দরজার বাইরে থেকে ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে ধাক্কা দেন। দরজাটি ভেতর থেকে লক করা না থাকায় সেটি খুলে যায়।

কক্ষের ভেতর কাউকে না পেয়ে টয়লেটে খুঁজতে গিয়ে মাইনুদ্দিন দেখতে পান, সাফায়েত কমোডের পাশে পড়ে আছেন।

কামরুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাফায়েতকে টয়লেটে পড়ে থাকতে দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম সে অসুস্থ। মাইনুদ্দিনকে চেক করতে বলি। তবে তার পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর আমি সুজানাকে কল করি। তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর ৯৯৯-এ কল করার পর ভাটারা থানা পুলিশ আসে।’

এই টয়লেটে পাওয়া যায় সাফায়েতের মরদেহ

ওই ফ্ল্যাটের আরেকটি কক্ষে দিনভর কামরুলের স্ত্রী থাকলেও তিনি পুরো সময়ে কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেননি বলে দাবি করেছেন। অন্যদিকে বাড়ির কেয়ারটেকার মাইনুদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, ২৬ ডিসেম্বর দুপুর ১টার দিকে নিচে নেমে আসেন সুজানা। ফ্লেক্সিলোড করতে যাবেন জানিয়ে তিনি বেরিয়ে যান।

সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেছে

সাফায়েত ও সুজানার নোভা মঞ্জিলে আসা এবং পরে সুজানার দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছে নিউজবাংলা।

এতে দেখা গেছে, সাফায়েত মাহাবুব ফারাইজী ও সুজানা তাবাসসুম সালাম নোভা মঞ্জিলের সামনে আসেন ভোর ৪টা ১১ মিনিটে। কিছু সময় অপেক্ষার পর সাফায়েতের মোবাইল ফোনটি নেন সুজানা। এরপর কাউকে কল দেন তিনি। বাড়ির মালিক কামরুল হক জানিয়েছেন, সাফায়েতের ফোন থেকে ওই সময়ে সুজানা তাকে কল করেছিলেন।

সুজানা কথা বলার পর সাফায়েতকে ফোনে কথা বলতে দেখা যায়। বাসার সামনে আসার সময় সাফায়েতের হাতে একটি ব্যাগ ছিল। সেখান থেকে ৪টা ১৬ মিনিটে তিনি একটি বোতল বের করেন। বোতলের মুখ খুলে গেটের সামনে দাঁড়িয়েই লালচে রঙের কিছু একটা পান করে আবার ব্যাগে রেখে দেন সাফায়েত।

৪টা ১৭ মিনিটে গেটে আসেন মালিকের ছেলে লাবিব। তিনি গেট খুলে দিলে সাফায়েত ও সুজানা বাড়ির ভেতরে ঢোকেন।

সিসিটিভির অরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, দুপুর ১টা ৪ মিনিটে ভবনের গেট খুলে বেরিয়ে আসেন সুজানা। তখন দুই পা ছিল খালি, জুতা জোড়া ছিল হাতে। খালি পায়েই দ্রুত হেঁটে চলে যান সুজানা।

সাফায়েতের মরদেহ পাওয়ার পর রাত ১টার দিকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

সাফায়েতের মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে নিখোঁজ সুজানা তাবাসসুম সালাম। ছবি: টুইটার

সুজানার অবস্থান অজানা

সাফায়েতের মায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি সুজানা তাবাসসুম সালাম। নোভা মঞ্জিল থেকে ২৬ ডিসেম্বর দুপুরে বের হওয়ার পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে সুজানা যে ভবনে থাকতেন সেখানে গিয়ে জানা গেছে, ভবনে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার পরিবারের। সেগুলো পঞ্চম তলায়। আর সুজানা ও তার সৎমা থাকতেন ছয়তলায় একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে। সুজানার বাবা আব্দুস সালাম গত বছরের সেপ্টেম্বরে মারা যান।

বাড়ির কেয়ারটেকার মো. হানিফ ও একাধিক ফ্ল্যাট মালিকের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। তারা জানান, সুজানা ভারতের সিমলায় পড়াশোনা করেছেন। তবে লোকজনকে বলতেন, আমেরিকায় পড়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ফ্ল্যাটের মালিক বলেন, ‘সুজানার আচরণ ছিল উচ্ছৃঙ্খল। তার কারণে ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের বিভিন্ন সময়ে বিব্রত হতে হয়েছে।’

কেয়ারটেকার মো. হানিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুজানা দেড় মাসের বেশি সময় ধরে ফ্ল্যাটে আসেন না। কেন আসেন না, জানি না। তবে মাস দেড়েক আগে একবার বলেছিলেন, পুলিশ তাকে খুঁজছে। পুলিশ এলে যেন কিছু না বলি।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, সুজানার পালিয়ে যাওয়াটা রহস্যজনক। তাকে পাওয়া গেলে রুমের মধ্যে কী হয়েছিল, জানা যাবে।

হত্যা মামলায় যা অভিযোগ

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে করা মামলায় সাফায়েতের মা শামীমুন নাহার লিপি অভিযোগ করেন, ভাটারা থানা তার মামলা নিচ্ছিল না। এ কারণে তিনি আদালতে মামলা করেছেন।

সুজানা ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ তয়াছির জাহান বাবু, ভাটারা থানার উপপরিদর্শক মো. মশিউর, সুজানার বন্ধু আফতাব, শাখাওয়াত, আসওয়াদ, নোভা মঞ্জিলের মালিক কামরুল হক ও কেয়ারটেকার রিপন। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে।

লিপির অভিযোগ, আসামিরা যোগসাজশের মাধ্যমে সাফায়েতকে হত্যা করেছেন।

সাফায়েতের সঙ্গে তার মা শামীমুন নাহার লিপি

লিপি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন অতিরিক্ত সচিব। বাবার মৃত্যুর পর তার সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে যান আমাকে। আমিই সব কিছু আগলে রাখছিলাম। তবে একটি চক্র রাজনৈতিক ও প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে সেগুলো হাতিয়ে নিয়েছে। খিলগাঁও যে বাড়িটি রয়েছে সেটিও দখল করতে চায়। এ জন্যই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’

বাবার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে একের পর এক ক্ষমতাধরদের মামলার শিকার হতে হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

লিপি জানান, তার স্বামী আমেরিকায় থাকেন। ছেলে সাফায়েতের জন্ম সেখানেই। ৩৭ বছর বয়সী সাফায়েত আমেরিকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। মায়ের জন্মদিনে ‘সারপ্রাইজ দিতে’ ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসেন। এর আগেও তিনি বিভিন্ন সময়ে দেশে এসেছেন। ঢাকায়ই তার সঙ্গে সুজানার পরিচয় হয়।

সুজানাকে মাদকাসক্ত দাবি করে লিপি বলেন, ‘এই মেয়ে আমার ছেলেকে ফাঁদে ফেলেছে। সে নাকি আমার ছেলের স্ত্রী বলে নিজেকে দাবি করত। তবে আমার ছেলে আমাকে বারবার বলেছে, ও বিয়ে করেনি।’

মামলার অভিযোগে লিপি অভিযোগ করেন, সুজানা ও পুলিশের দুই সদস্য পূর্ব পরিচিত। সুজানাকে সঙ্গে নিয়ে তার খিলগাঁওয়ের বাসাতেও গিয়েছিলেন বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ তয়াছির জাহান বাবু ও মো. মশিউর। গত ১০ ডিসেম্বর তারা বাসায় গিয়ে হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন লিপি।

এই হুমকির পর ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের এক অনুষ্ঠান শেষে মধ্যরাতে বাসায় ফেরেন সাফায়েত। এ সময় তার সঙ্গে সুজানা, আফতাব, শাখাওয়াত ও আসওয়াদ ছিলেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, সুজানাকে দেখতে পেয়ে লিপি রেগে যান। পরে একটি উবার কল করে সাফায়েত, সুজানাসহ অন্যরা খিলগাঁওয়ের বাসা থেকে চলে যান।

সাফায়েত পরদিন না ফেরায় মোবাইল ফোনে কল করে সাড়া পাননি লিপি। এরপর তিনি ভাটারা থানায় তয়াসির জাহান বাবুর কাছে গেলেও সাফায়েতের অবস্থান জানতে পারেননি।

লিপি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ আমার ছেলেকে মেরে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করতে চেয়েছিল। তাদের কাছে সুজানার ঠিকানা থাকলেও আমাকে দেয়নি। এরপর ২৭ ডিসেম্বর দুপুরে ফোন করে জানানো হয়, আমার ছেলের মরদেহ পাওয়া গেছে। আমি ছেলের লাশ পেয়েছি সোহরাওয়ার্দীতে।’

লিপি বলেন, ‘আমি নোভা মঞ্জিলে ওই ফ্ল্যাটে যেতে চেয়েছি, কিন্তু মালিক ও কেয়ারটেকার যেতে দেয়নি। ৩ জানুয়ারি ভাটারা থানায় মামলা করতে গেলে তারা নেয়নি। তয়াসির ও মশিউর আমাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কয়েকটি সাদা কাগজে সই নিয়ে বের করে দেন। ফলে বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছি।’

কী বলছেন এসি তয়াসির

লিপির করা হত্যা মামলায় বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার তয়াসির জাহান বাবুকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে। তিনি স্বপদে থেকে এখনও দায়িত্ব পালন করছেন।

তয়াসিরের দাবি, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুজানা কোনোভাবেই আমার পূর্ব পরিচিত নন। তাকে রক্ষার কোনো চেষ্টাও আমি বা ভাটারা থানা পুলিশ করেনি। যেটার প্রমাণ হলো অপমৃত্যুর মামলা।’

তয়াসির বলেন, ‘ওই মামলায় আমরা ডিটেইলস উল্লেখ করেছি। সুজানার সঙ্গে কোথা থেকে কীভাবে তিনি এসেছেন? কোন অবস্থায় সাফায়েতের মরদেহ পাওয়া গেছে, সবই উল্লেখ আছে। এই মামলার সব তথ্য সাফায়েতের মা আমাদের দিয়েছেন।’

সাফায়েতের মৃত্যুর আগে তার মা লিপির বাসায় গিয়ে হুমকি দেয়ার অভিযোগ নাকচ করেন তয়াসির। তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। আমি তার বাসায় যাইনি। আমি কেন যাব?’

মামলার ৩, ৪ ও ৫ নম্বর আসামি আফতাব, শাখাওয়াত ও আসওয়াদকে তাদের ঠিকানায় গিয়ে পাওয়া যায়নি। তারা যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন তাও বন্ধ রয়েছে।

৬ নম্বর আসামি মো. রিপনকে মামলায় নোভা মঞ্জিলের কেয়ারটেকার উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ নামে কেউ নোভা মঞ্জিলে কাজ করেন না। মামলার আরেক আসামি মো. মশিউর ভাটারা থানার উপপরিদর্শক।

সুজানা তাবাসসুম সালাম। ছবি: টুইটার

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন যা বলছে

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে সাফায়েতের ময়নাতদন্ত করেন ফরেনসিক মেডিসিন ও টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সৈয়দা নাদিয়া হাসান।

সাফায়েতের হিসটোপ্যাথলজি, ক্যামিক্যাল এনালাইসিস রিপোর্ট ও পোস্টমর্টেম এক্সামিনেশন রিপোর্টে ডা. নাদিয়া লিখেছেন, তার কিডনি জটিলতা ছিল। হঠাৎ হার্ট থেকে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ না পাওয়ায় সাফায়েতের মৃত্যু হয়।

সাফায়েত ২০২০ সালে কিডনিসংক্রান্ত জটিল রোগে আক্রান্ত হন বলে জানিয়েছেন তার মা।

তদন্ত কোন পর্যায়ে

সাফায়েতের মা আদালতে হত্যা মামলা করার পর তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পিবিআই। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তারা মামলার নথিপত্র পেয়েছে।

তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (দক্ষিণ) অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মাত্র মামলাটি পেয়েছি। আমরা ঘটনাস্থল ভিজিট, বাদীর সঙ্গে আলোচনা এবং সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করব। তদন্তের অগ্রগতি হওয়া সাপেক্ষে বাকি তথ্য জানানো যাবে।‘

পিবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা অতীতে অপরাধে জড়িত পুলিশ সদস্যদের খুঁজে বের করে চার্জশিট দিয়ে বিচারের মুখোমুখি করেছি। এ মামলায়ও কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর