বসন্তের রঙিন আনন্দে মেতেছে প্রকৃতি। সেই আনন্দেই কি না নিজ শহরের জনপ্রিয় একটি চা স্টলকে আগাগোড়া রাঙিয়ে ফেললেন দুই তরুণী!
ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজসংলগ্ন কাঁপাকাঁপা মোড়ের সেই চা স্টলটিতে বসলে এখন হতে পারে রিকশায় চড়ার অনুভূতি। কারণ ঐতিহ্যের রিকশাচিত্রেই এটিকে সাজিয়েছেন প্রমা আর জেনি।
কলেজ ক্যাম্পাসের পূর্ব পাশে পুকুর পারের এই চায়ের দোকানটি ‘রাসেল ভাইয়ের চা স্টল’ নামেই পরিচিত। প্রতিদিন কলেজপড়ুয়া শত শত তরুণ-তরুণীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে জড়ো হন, আড্ডা দেন। চা-চামচ আর কাপের টুংটাং শব্দে এসব আড্ডায় জমে ওঠে রাজনৈতিক, সমসাময়িক নানা টপিক।
চা দোকানি মো. রাসেলের নামে করা আর্ট। ছবি:নিউজবাংলা
তবে রঙের ছোঁয়ায় আড্ডামুখর এই স্থানটিতে সবার মাঝে ইতিবাচক চিন্তা ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী প্রমা রাহা আর ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নুসরাত জেনী। ফুল, লতা-পাতা আর রিকশাচিত্রের মাধ্যমেই সব জড়তা ও নেতিবাচক চিন্তাভাবনাকে মুছে দিতে চান তারা।
প্রমা জানান, চায়ের দোকানটিতে রঙিন ছবি আঁকার কাজটি তারা করেছেন মানুষকে আনন্দ দিতে।
প্রমা বলেন, ‘দেশের বেশির ভাগ চায়ের দোকানের পরিবেশই অপরিচ্ছন্ন। তবু চা না খেয়ে তো আর থাকছে না কেউ। তাই রং দেখতে দেখতে প্রফুল্লচিত্তে চায়ের কাপে চুমুক দিলে সবার ক্লান্তি দূর হবে। মনের মাঝে ভালোবাসা ও শুভচিন্তার উদ্রেক হবে। এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।’
সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ প্ৰফেসর অসীম কুমার সাহা বলেন, ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটির টিএসসি এলাকার চায়ের দোকানগুলোতে আঁকা রিকশাচিত্র নজর কেড়েছিল দেশবাসীর। এখন সেই রঙের ছোঁয়া লাগল দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যাপীঠ আমার ক্যাম্পাসে। আমাদের প্রাণের শহর ফরিদপুরে।’
স্টলটির সামনে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছেন এক তরুণী। ছবি:নিউজবাংলা
ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মফিজুর রহমান শিপন বলেন, ‘জেলার কিছু তরুণ-তরুণী স্বেচ্ছায় নিজ শহরের প্রাণকেন্দ্রে চায়ের দোকানটিকে রাঙিয়ে দিল বাংলার ঐতিহ্যবাহী রিকশাচিত্রে। জনপ্রিয় এই জায়গাটিকে এমন নতুন সাজে দেখতে দারুণ লাগছে।’
চা দোকানি মো. রাসেল বলেন, ‘আমি মূর্খ মানুষ। তবে শিক্ষিতদের চা খাওয়াই। যে শিক্ষার্থীরা আমার দোকানকে সাজিয়ে দিয়ে গেল- আমি তাদের কাছ থেকে বড় শিক্ষা নিলাম। আমার দোকানের এই চিত্র দেখে আমারই চিত্ত আজ হেসে উঠছে বারবার!’
এই সময় তিনি এই কাজ ও উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত তাহিয়াতুল জান্নাত, প্রমা রাহা, নুসরাত জামান জেনী, জান্নাতুন নাহার, অভিজিৎ, আবিদ, আকিব, রাহাত, জেবাসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান।