করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে বন্ধ হওয়ার পর আবার স্কুলে ফিরল শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দেশের স্কুল-কলেজ খুলে দিলে সকাল থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সবার মধ্যেই ছিল খুশির ঝিলিক।
তবে স্কুলগুলোর যেসব শিক্ষার্থী করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধী টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে, তারাই কেবল শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পেরেছে। বাকিদের ক্লাস হবে অনলাইনে।
রাজধানীর একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, আবারও সশরীরে ক্লাস চালু হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস।
সকাল থেকেই রাজধানীর প্রভাতী বিদ্যানিকেতনের সামনে দেখা গেছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভিড়। সময়ের আগে অনেকেই এসেছেন স্কুলের ফটকের সামনে। সেখানে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে কুশল বিনিয়ম করছেন।
শিক্ষার্থীদের স্কুলে প্রবেশপথেই তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে তাপমাত্রা মাপা হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শ্রেণিকক্ষের নির্ধারিত আসনে গিয়ে বসে। এ সময় সবার মুখে ছিল মাস্ক।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পা রেখেই আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। স্কুল প্রাঙ্গণ আবারও মুখরিত চিরচেনা সেই পরিবেশে। যেখানে শিক্ষার্থীরা আবার সশরীরে ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন আর শিক্ষকরাও পাঠদান করছেন।
জানতে চাইলে প্রভাতী বিদ্যানিকেতনের নবম শ্রেণির ছাত্র আবদুল্লাহ সালেহ বলে, ‘বাসায় থাকতে একদমই ভালো লাগে না। আবারও স্কুলে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।’
একই সুরে জানায় ইস্পাহানি বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মালিহা বিনতে ঐশী।
‘অনলাইনের ক্লাস ভালো লাগে না। স্কুলে আসলে কখন যে সময় পার হয়ে যায়, টেরই পাই না। আবারও স্কুলে এসে খুবই ভালো লাগছে।’
উচ্ছ্বাস শিক্ষকদেরও
সশরীরে পাঠদানে অংশ নিতে পেরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষকরাও। তারা বলছেন, শিক্ষকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বোঝাপড়া। দীর্ঘদিন পর এটি আবার শুরু হওয়ায় তারা খুবই আনন্দিত।
ইস্কাটন গার্ডেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নেয়ার জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরার বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে।’
প্রভাতী বিদ্যানিকেতনের সিনিয়র শিক্ষক পুলিং মালাকার স্কুল খোলায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে অংশ নিতে পারায় আমি খুবই আনন্দিত।’
ইস্পাহানি গ্লার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাদেকা বেগম বলেন, ‘আবারও স্কুলে ফিরতে পেরে আমরা সবাই আনন্দিত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নেয়ার জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা করেছি।’
অভিভাবকরা মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনা সংক্রমণ রোধে নানা ধরনের নিয়ম-কানুন মানা হলেও গেটের বাইরে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা জটলা তৈরি করছেন। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের আগে তাপমাত্রা মাপা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার লাগানো, সারিবদ্ধ হয়ে ভেতরে প্রবেশ, সামাজিক দূরত্ব রেখে ক্লাস রুমে বসা, মাস্ক পরাসহ নানা ধরনের নিয়ম-কানুন মানা হচ্ছে। অথচ গেটের বাইরে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে ভেতরে প্রবেশ করতে চেষ্টা করছেন। বিষয়টি নিয়ে বারবার স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের সতর্কও করছে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। টানা দেড় বছর বন্ধ রাখার পর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বরে সব স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হয়। পরে ধাপে ধাপে খুলে যায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও।
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে গত ২১ জানুয়ারি ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। ঘোষণা অনুযায়ী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকবে আগামী ১ মার্চ পর্যন্ত।