পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগে রাস্তায় লাশ নিয়ে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ। এর মধ্যে একটি গাড়ি সেই মরদেহকে চাপা দিয়ে এগিয়ে গেল।
গাড়িটিতে বসা ছিলেন স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে গাড়িটি উপজেলার সহকারী কমিশনারের।
সোমবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে সুনামগঞ্জের সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের পাগলাবাজার এলাকায়। পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে নতুন করে ক্ষুব্ধ করেছে ঘটনাটি।
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় চুরির মামলায় আটকের পর জামিনে মুক্তি পাওয়ার ১১দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন উজির মিয়া নামে একজন। তার মৃত্যুর পর স্বজনরা অভিযোগ করেন, আটক অবস্থায় পুলিশ তাকে নির্যাতন করেছে। এর ধকলেই তিনি অসুস্থ হন এবং মারা যান।
স্বজন ও এলাকাবাসী উজির মিয়ার মরদেহ নিয়ে বেলা দুইটার দিকে অবস্থান নেয় পাগলা বাজার এলাকায়। তারা অভিযোগ করেন, শান্তিগঞ্জ থানার তিন এসআই থানা হাজতে নির্যাতন করেন উজিরকে।
সড়কে উজির মিয়ার মরদেহ ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এর মধ্যে হঠাৎ একটি গাড়ি রাস্তায় রাখা উজির মিয়ার মরদেহকে চাপা দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এতে অবরোধে বসা জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তারা মাটিতে বসে চালকের বিচার দাবি করতে থাকে।
গাড়িতে বসেছিলেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার উজ জামান। তিনি দাবি করেছেন, তাকে বহনকারী গাড়ি মরদেহকে চাপা দেয়নি। জনতা তার গাড়িতে হামলা করেছিল। চালক তখন মরদেহটি পাশ কাটিয়ে গেছে।
তবে এ ঘটনার দুটি ভিডিও ক্লিপ হাতে এসেছে নিউজবাংলার হাতে, যাতে ইউএনওর দাবি অসত্য বলে দেখা যায়।
ভিডিওতে দেখা যায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার সখিনা আক্তারের গাড়ি আসে ঘটনাস্থলে। জনতা গাড়িটিকে সামনে যেতে বাধা দিলে চালক না থেমে রাস্তায় রাখা উজির মিয়ার লাশকে চাপা দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। সে সময় জনতা রাস্তায় নেমে এলে তাদের ওপর দিয়েও চালিয়ে যাওয়া হয় গাড়িটি। তবে সে সময় তারা বাধা না দিয়ে রাস্তা ছেড়ে দেয়।
ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় সাংবাদিক ইয়াকুব শাহরিয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গাড়িটি ছিল এসিল্যান্ডের। কিন্তু গাড়িটিতে বসেছিলেন ইউএনও সাহেব। উত্তেজিত জনতা গাড়িটি সামনে আগাতে বাধা দেয়। কিন্তু ড্রাইভার এতগুলো মানুষের ভিড়ে গাড়িটি দ্রুত টেনে নিয়ে উজির মিয়ার বুকের ওপর দিয়ে চালিয়ে যান।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী উজির মিয়ার চাচা মখলেছুর রহমান বলেন, ‘লাশটা রাস্তায় রাখা। ইউএনও সাহেব তো নামিয়া আমরার কথা শুনতে পারতা। কিন্তু তাইন গাড়ি দিয়া মরা লাশটারে চাপা দিয়া গেলা। আমরা এমন ইউএনও চাই না।’
জানতে চাইলে স্থানীয়দের অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও মো. আনোয়ার উজ জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মরদেহকে গাড়ি চাপা দেয়া হয়নি। উত্তেজিত জনতা আমার গাড়ির দিকে হামলা চালায় এবং গাড়ির কাচে আঘাত করতে থাকে। এ সময় ড্রাইভার লাশটির পাশ কাটিয়ে চলে যায়। যারা এই অভিযোগ করছেন সেগুলো মিথ্যা। এমন কিছু সেখানে হয়নি।’
ইউএনও কেন তার গাড়ি ব্যবহার করছিলেন, সে বিষয়ে জানতে সহকারী কমিশনার সখিনা আক্তারের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
সেই গাড়ির চালকের বক্তব্যও পাওয়া সম্ভব হয়নি।