বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উজির মিয়ার মৃত্যুতে ৩ পুলিশকে দোষারোপ

  •    
  • ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২০:৪৪

উজির মিয়ার পরিবারের অভিযোগ, শান্তিগঞ্জ থানার তিন এসআই দেবাশীষ রায়, পার্টন চন্দ্র দাস ও আক্তারুজ্জামান মিথ্যা মামলা দিয়ে উজির মিয়াকে হাজতে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন করেছেন।

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় চুরির মামলায় উজির মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।

সোমবার সকালে ছাতক উপজেলার কৈতক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা ইউনিয়নের বাসিন্দা উজির মিয়া। তার মৃত্যুর পর অভিযুক্ত তিন পুলিশ সদস্যের বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও পাগলা এলাকার সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন এলাকাবাসী।

উজির মিয়ার পরিবারের অভিযোগ, শান্তিগঞ্জ থানার তিন এসআই দেবাশীষ রায়, পার্টন চন্দ্র দাস ও আক্তারুজ্জামান মিথ্যা মামলা দিয়ে উজির মিয়াকে হাজতে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন করেছেন।

এদিকে এ ঘটনায় উজির মিয়া জামিনে মুক্ত হওয়ার পর এবং আটকের পরদিন আদালতে তোলার সময়কার কয়েকটি ছবি নিউজবাংলার হাতে এসেছে। এসব ছবিতে উজির মিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধর ও জখমের চিহ্ন দেখা গেছে। এ ছাড়া তার মাথায় ডান দিকে একটি বড় আঘাতের চিহ্নও দেখা গেছে।

নিউজবাংলার কাছে আসা ছবিতে উজিরের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে

পরিবারের দাবি, উজির মিয়াকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হয়। এই কষ্ট সহ্য না করতে না পেরেই তার মৃত্যু হয়েছে।

উজিরের ছোট ভাই ডালিম মিয়া বলেন, ‘আমার ভাইকে ৯ তারিখ মিথ্যা মামলা দিয়ে এসআই দেবাশীষ, পার্টন চন্দ্র দাস ও আক্তারুজ্জামান সন্দেহভাজন গরু চোর হিসেবে ধরে নিয়ে যায়। অথচ শত্রুমর্দন গ্রামের সবাই বলতে পারবে- আমরা কেমন পরিবারের সন্তান। তারা আমার ভাইকে আটক করে সারা রাত হাজতে মেরেছে।’

ডালিম জানান, গ্রেপ্তারের পরদিন আদালতে নিজে থেকে হেঁটে যেতে পারছিলেন না উজির। মারধরের সময় তিনি পুলিশকে কাকুতিমিনতি করে বলেছিলেন, ‘আপনে সবরে জিকাইন। আমার গ্রামের মেম্বার চেয়ারম্যান যদি আমারে চুর কয়, আমি ফাঁসিত ঝুলি যাইমু। তবুও মাইরোইন না আমারে।’

ডালিম বলেন, ‘তারা আমার ভাইয়ের কথা শুনেনি। তারা আমার ভাইকে আগেই ৭ দিনের মধ্যে জেলে ঢুকানোর হুমকি দিয়েছিল। ভাইয়ের সারা শরীরে মাইরের দাগ। তারা মাথায়ও মেরেছে।’

নিহতের ভাতিজা ইমরান হোসেন তালুকদার বলেন, ‘জামিনের পর চাচারে প্রথমে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছি। পরে তার অবস্থা খারাপ দেখে সিলেট ওসমানী মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক সপ্তাহ চিকিৎসা নেয়ার পর গতকাল তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। এ অবস্থায় কৈতক হাসপাতালে নেয়া হলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি মারা যান। আমরা এই পুলিশ সদস্যদের বিচার চাই, আমার চাচা নির্দোষ ছিলেন।’

গ্রামের মুরব্বি হিসেবে পরিচিত মখলিছুর রহমান বলেন, ‘আমরা এর আগেও পুলিশকে গরু চোর, হত্যা মামলার আসামিকে ধরতে দেখেছি। কিন্তু এমন মাইর দিতে দেখি নাই। ছেলেটারে ইচ্ছামতো মারা হইছে। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মরেই গেছে। আমরা গ্রামের সবাই এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার চাই।’

তবে পুলিশের নির্যাতনে উজিরের মৃত্যু হয়েছে, তা মানতে নারাজ সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন তাকে গ্রেপ্তার করেছি তখন জেনেই করেছি। সে যখন আমাদের কাছে ছিল তখন তো কিছু বলেনি বা পরেও এসে কিছু জানায়নি। তাহলে ১১ দিন পর কেন বলা হচ্ছে, পুলিশের নির্যাতনে মারা গেছে। আসলে সে তো আমাদের হেফাজতে ছিলই না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে গভীর তদন্ত প্রয়োজন। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তবে আঘাতের যে চিহ্নগুলো পাওয়া গেছে, তা ওই সময়ের না পরের সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।’

এদিকে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের আশ্বাস দিলে প্রায় ৩ ঘণ্টার সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন কর্মসূচি সমাপ্ত করেছেন এলাকাবাসী।

উজিরের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর