মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম। এরপর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ভাষা বীরদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা স্বরূপ তারা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। করোনার কারণে এবার রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার সশরীরে শহীদ মিনারে উপস্থিত হননি। তাদের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় শহীদ মিনারে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পক্ষে তাদের সার্জেন্ট অফ আর্মস ও সহকারী সার্জেন্ট অফ আর্মস ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, তিন বাহিনীর প্রধান, চিফ হুইপের পক্ষে তার সহকারী সার্জেন্ট অফ আর্মস, জাতীয় পার্টি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রের পক্ষে তাদের প্যানেল মেয়র শ্রদ্ধা জানান।
পর্যায়ক্রমে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, অ্যাটর্নি জেনারেল, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নেতৃত্বে ১৪ দল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ, র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংস্থার শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাত সাড়ে ১২টার দিকে জনসাধারণের জন্য শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এর পরই একে একে শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ।
শুধু রাজধানীতে নয়, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জেলা ও থানা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। পাড়া-মহল্লায় শিশু-কিশোরা শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।
২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন। অর্ধনমিত রাখা হবে জাতীয় পতাকা। একই সঙ্গে সর্বত্র ওড়ানো হবে শোকের কালো পতাকা। সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বেতারে ভাষা দিবসের বিশেষ ক্রোড়পত্র ও অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হচ্ছে।
পাকিস্তানি সরকার মায়ের ভাষা বাংলাকে কেড়ে নিয়ে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল উর্দু। কিন্তু তা মানতে পারেনি বাঙালি। ১৯৫২ সালের সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি দেখিয়েছে প্রতিবাদের স্পর্ধা। ১৪৪ ধারা ভেঙে মায়ের ভাষা বাংলাকে রক্ষায় সেদিন রাজপথে নেমেছিলেন ছাত্রছাত্রী ও অজস্র তরুণ। তাদের শাণিত মিছিল ঠেকাতে অকাতরে গুলি চালায় পাকিস্তানিরা। পলাশ ফোটার দিনে বুকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ।
প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় মায়ের ভাষা বাংলা। তাই দিনটি যেমন গৌরবের, অহংকারের, তেমনি শোকেরও। বাঙালি ছাড়া, পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো জাতিকে ভাষা রক্ষায় প্রাণ দিতে হয়নি। তারই স্বীকৃতি হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবেসের স্বীকৃতি।
বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানায়। আর তাতেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পায় অমর একুশে। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর মধ্যে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।